মাছ কাটা আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার

সকাল থেকে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষায় বসে থাকেন অর্ধশতাধিক নারী। তাদের সামনে থাকে বঁটি ও ছাই। বাজার থেকে ক্রেতারা মাছ কিনে নিয়ে আসতেই দরদাম শুরু হয়। দুপক্ষের চুক্তি হলেই শুরু হয় দ্রুত কাটাকুটি। কাটা শেষ হলেই ক্রেতার ব্যাগে দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে মাছ কেটে আয় করে সংসার চালান এই নারীরা।
নাটোর শহরের নিচাবাজারে এমন অনেক নারীই মাছ কাটা পেশায় জড়িত। বেঁচে থাকার তাগিদে এ পেশার আয় থেকে তারা দৈনন্দিন সংসারের সব খরচ নির্বাহ করেন। দিন দিন মাছ কেটে নেওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আয়ও বাড়ছে।
জেলার প্রতিটি মাছবাজারে গেলে চোখে পড়ে এমন চিত্র। সরেজমিনে নিচাবাজারে দেখা যায়, সকাল থেকে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষায় বসে আছেন আয়েশা, জুলেখা, রহিমাসহ অর্ধশতাধিক মধ্যবয়সী নারী। তাদের সামনে রয়েছে বঁটি ও ছাই। তাদের মধ্যে কেউ দ্রুত ও যত্ন করে কাটছেন মাছ। কেউ কাজ পেতে ক্রেতাদের সঙ্গে করছেন দর-কষাকষি। কাটা শেষ হলেই টুকরো মাছ ক্রেতার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন।
ক্রেতারা বাজার থেকে মাছ কিনে এসে ঝামেলা এড়াতে চলে আসেন মাছ কাটাশ্রমিক নারীদের কাছে। তারপর নারী শ্রমিকরা মাছের প্রকারভেদ অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করেন। কেজিপ্রতি ছোট পুঁটি ও ট্যাংরা মাছ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মাছ ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং বড় মাছ ১৫ থেকে ২০ টাকায় কেটে থাকেন।
প্রতিদিন একজন নারী মাছ কেটে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে তাদের মাছ কাটা। এ বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ জন নারী। অনেকে জীবিকার তাগিদে এ পেশায় এসেছেন। তাদের কারও স্বামী রিকশা ও ভ্যান চালনা এবং দিনমজুর পেশায় আছেন। আবার কারও স্বামী মারা গেছেন। অনেক নারীর স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে তাদের ফেলে চলে গেছেন।
মাছ কাটা শ্রমিক ডলি বেগম বলেন, আমি চার বছর ধরে এখানে মাছ কুটার কাজ করছি। মাছ কুটে যে টাকা পাই, তা নিয়ে আমার সংসার চলে।

মর্জিনা বেওয়া বলেন, আমার স্বামী পাঁচ বছর আগে মারা গেছে। দুই সন্তান ভাড়া বাসায় থাকি। মাছ কুটে যা পাই, তা দিয়ে ঘরভাড়া আর সংসার খরচ কোনোমতে চলে।
আলিয়া বিবি বলেন, স্বামী তিন বছর আগে বিয়ে করে এক সন্তানসহ আমাদের ফেলে চলে গেছেন। পরে মানুষের বাসায় কাজ করা শুরু করি কিন্তু মাসে মালিক যা টাকা দেয়, তা দিয়ে আমাদের চলে না। তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে মাছ কুটা কাজ করছি।
জুলেখা বেগম বলেন, মানুষ মাছ কিনলে, আমরা ভাত খেতে পারি, চলতে পারি একটু ভালো করে। অনেক বাড়ির বউ-ঝিরা মাছ কুটতে চায় না বলেই আমরা এ কাজ করে দিই। কুটে দিয়ে যা পাই, তা দিয়ে চলে আমাদের সংসার।
মাছ কাটতে আসা রিয়াজ হোসেন লিটু বলেন, বাড়িতে বড় মাছ কাটা অনেক ঝামেলার বিষয়। তা ছাড়া বাসায় বড় মাছ কাটার অভিজ্ঞতা অনেকের থাকে না। এখানে দ্রুত মাছ কেটে দেন নারীরা। তা ছাড়া বাসায় যেভাবে ব্যবহার করা হয় মাছ, সেভাবেই তারা কেটে সুন্দর করে পিস করে দেন। এ জন্য এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে মাছ নিয়ে আসি।
সরকারি কর্মকর্তা রহিম উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রী সকালে অফিসে চলে যাওয়ায় মাছ কাটা ঝামেলা হয়ে যায়। বাড়িতেও আর কেউ নেই। এ কারণে বাজার থেকে মাছ কিনে সোজা এখানে চলে আসি। কম সময়ে মাছ কেটে দেন তারা। বাসায় গিয়ে শুধু ধুলেই হয়।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মাছের বাজার থেকে মাছ কেনার পর অনেকেই ডাকাডাকি করতে থাকেন। মাছ কেটে নিয়ে যান। অল্প টাকায় তারা মাছ কেটে ধুয়ে দিচ্ছেন। বাড়িতে ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য প্রায় সবাই বাজার থেকে মাছ কেটে ধুয়ে নিয়ে যান। এ জন্য মাছের সাইজ অনুযায়ী টাকা নিয়ে থাকেন। সাইজ বড় হলে কম আর ছোট হলে বেশি। এ কাজ করে প্রত্যেকে তাদের সংসারের হাল ধরেছেন।
এনএ