দিনাজপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আরাজি জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে পাকাঘর বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের দাবি, মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়া ঘর বিক্রি হয়েছে। অথচ মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য এসব ঘর বরাদ্দ করেছেন।
সোমবার (৪ এপ্রিল) সরেজমিনে দুপুরে উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের ডাঙ্গারহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আশ্রয়ণের সম্মুখ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
ভূমিহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষের বাড়ি সত্যিকারের ভূমিহীনদের না দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বাবলম্বী ও স্বচ্ছল পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বরাদ্দে ইউনিয়ন ভূমি তহসিলদার মোক্তার হোসেন ও স্থানীয় কাইছাল আমিনের মাধ্যমে ভূমিহীনদের কাছে টাকা নিয়ে বাড়ি বরাদ্দ দিচ্ছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশেপাশে যারা ভূমিহীন রয়েছে তাদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে দূর-দূরান্তের স্বাবলম্বী পরিবারদের কাছে টাকার বিনিময়ে সরকারের মহতি উদ্যোগের এসব ঘর বরাদ্দ দিচ্ছেন তারা। ভূমিহীন নয় এমন অনেকেই টাকার বিনিময়ে বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার বাড়ি বরাদ্দ নিয়ে বাড়তি দামে অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন।
তারা আরও দাবি করেন, ঘর বরাদ্দ অনিয়মের বিরুদ্ধে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিতে গেলে বাধে বিপত্তি। ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর অভিযোগের বিষয়ে জানাতে যাওয়ার সময় ইউএনওকে স্যার না বলে ম্যাডাম বলায় ইউএনও তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
পরে ইউএনও রাশিদা আক্তার ও তার অফিস সহকারী হায়দার আলী ভুক্তভোগী ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদেরকে এসব নিয়ে ধমক প্রদান করে চুপ থাকতে বলেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন বলে জানান অভিযোগকারীরা।
সুবিধাবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ স্থানীয় ভূমিহীনরা সরকারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ঘরগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়।
এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের আসার খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ইউএনও রাশিদা আক্তার ও ওসি কামাল হোসেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা ইউএনওর সামনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে সরকার থেকে দেওয়া ঘর পাওয়ার জন্য কান্নাটি করেন। পরে তালা খুলে দিয়ে বিক্ষুদ্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করেন ইউএনও রাশিদা আক্তার।
ভুক্তভোগী ইনছান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অস্বচ্ছল হওয়ার পরও টাকা না দেওয়ায় আমরা ঘর বরাদ্দ পাই নাই। যারা সম্পদশালী তারা টাকার বিনিময়ে ঘর পাচ্ছে। আবার সে ঘর পরে অন্যের কাছে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছে।
নুরামীন ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার কাদের জন্য এসব ঘর বরাদ্দ দিয়েছে? যাদের জমিজমা নেই। ভূমিহীন, গৃহহীন রাস্তাঘাটে থাকা মানুষরা তো এসব ঘর পাওয়ার কথা। কিন্তু তারা ঘর পাচ্ছে না। উল্টো যাদের দুই চার বিঘা জমি আছে, তারাই ঘর পাচ্ছে। এলাকার ভূমিহীনরা ঘর পাচ্ছেন না কেন? অফিসাররা টাকার বিনিময়ে ঘর দিচ্ছে। পরে আবার সেই ঘর বেচা-কেনা হচ্ছে।সরকার কি বিক্রি করার জন্য ঘর দিয়েছে?
ভূমিহীন শাহানাজ বেগম বলেন, ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করার পরও আমার নামে ঘর বরাদ্দ হয়নি। কারণ আমরা টাকা দিতে পারি নাই। বরং যারা টাকা দিয়েছে তারাই সরকারি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। এই অনিয়মের বিষয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিতে গেলে উল্টো অপমান হয়ে আসতে হয়েছে। সরকারি ঘর নিয়ে এই কেনা-বেচা বন্ধ করতে হবে।
বিভিন্নজনের তোলা অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের তহসিলদার মোকতার আলী। ঢাকা পোস্টের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দের তালিকায় কারও নাম তোলা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি যে শাস্তি পাব তা মাথা পেতে নিব।
অনিময় দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশিদা আক্তার বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে অভিযোগকারীদের মধ্যে কেউ যদি সত্যিকার অর্থে ভূমিহীন হয়ে থাকে, এর পরের প্রকল্পে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। এ সময় অভিযোগকারীদের সাথে ক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ইমরান আলী সোহাগ/আরআই