কিশোরগঞ্জে ২৬২ হেক্টর বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত

ভারতের মেঘালয় ও আসামে ২৬৭ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় উজানের পানির ঢল সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরি হয়ে এসে নেমেছে কিশোরগঞ্জের হাওরে। সে কারণে কিশোরগঞ্জে হাওরাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোয় পানি বাড়ছে। এতে বাড়ছে হাওরপাড়ের কৃষকদের ফসল হারানোর শঙ্কাও।
বিশেষ করে জেলার ধনু, বাউলাই ও ঘোড়াউত্রা নদীর পানি আগের তুলনায় আরও বেশি বেড়েছে। আর এই পানিবৃদ্ধির ফলে জেলার হাওরের নিম্নাঞ্চলে থাকা কাঁচা ধানই কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ইটনা উপজেলায় বেশি সমস্যা হয়েছে। এ ছাড়া মিঠামইন, নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের জমিগুলো তলিয়ে ধানের ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ হাওরের প্রায় ২৬২ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আর সেই ধানগুলোর ৮০ ভাগ পাকা ধান। কাঁচা-পাকা এই ধানগুলোই কৃষক কেটে ঘতে তুলতে চেষ্টা করছেন।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাওরের নদীর পানি বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। আরও জানা গেছে, হাওরের ৭৩টি ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১২টি বড় ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৯০ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলে বোরো চাষ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর। আর হাওরের বাইরে উজান এলাকায় চাষ হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে।

এদিকে কাঁচা-পাকা ধান কাটা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হাওরের অনেক কৃষক। তাদের মধ্যে ইটনা হাওরের কৃষক বকুল মিয়া জানান, তিনি বোরো ধান করেছিলেন ৭৫ শতাংশ জমিতে। স্থানীয় মহাজন আর এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বোরো ধানের জমিতে খরচ করেছেন তিনি। ধান পাকার আগেই পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে। এখন ধান না কাটলেও বিপদ, কাটলেও বিপদ।
স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এলাকার কৃষকদের ফসল রক্ষায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন এবং ফসল রক্ষা বাঁধগুলো সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। আর যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত শনিবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সেই পানি নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি হয়ে কিশোরগঞ্জের ধনু, বাউলাই ও ঘোড়াউত্রা নদীতে প্রবল বেগে আসায় হঠাৎ ৬ থেকে ৭ ফুট পানি বেড়ে যায়। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার কিছু খাল-বিলের জমি তলিয়ে গেছে। তবে মূল হাওরগুলোতে এখনো পানি ঢোকেনি।
তিরি আরও জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হাওরের নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। তবে এই পানিতে এখনো কোনো বাঁধ ভাঙেনি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিশোরগঞ্জে হাওরের এ পর্যন্ত ২৬২ হেক্ট জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল। সেই ধানগুলো কৃষক কাটতে শুরু করেছেন। আর যে ধানগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল তা ৮০ ভাগ পাকা। কারণ, সেই নিচু জমিতে কৃষক ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছিল। হাওরের পানির পরিস্থিতি দেখাভাল করার জন্য কৃষি বিভাগে কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। মূল হাওর এখনো নিরাপদে আছে।
এসকে রাসেল/এনএ