রিসোর্টে দম্পতির অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল
পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গলের রিসোর্টের বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে দম্পতির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অভিযোগ স্বীকার করেছেন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসেছিলেন ওই দম্পতি। রাত্রীযাপনে উঠেছিলেন উপজেলার তামিম রিসোর্ট নামে এক রেস্ট হাউসে।
কিন্তু ওই রিসোর্টে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হন এ দম্পতি। রিসোর্টের দুই কর্মচারী বাথরুমের টিস্যু বক্সের ভেতরে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে রাখেন। দম্পতির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে ব্লাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছিল ওই দুই কর্মচারী।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন— সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার চড়িপারা এলাকার আবুল কালামের ছেলে রেজোয়ান (২৩) ও শহরের বিরাইমপুর এলাকার মৃত শফিক মিয়ার ছেলে খালেদ মিয়া (২৭)।
গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভিকটিম দম্পতি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দুই অভিযুক্তকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর পুলিশ মামলার দুই আসামিকে ধরতে সক্ষম হয়।
শ্রীমঙ্গল থানা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৯ জুলাই কুলাউড়া থেকে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসেন ওই দম্পতি। তারা উপজেলার মৌলভীবাজার সড়ক-সংলগ্ন তামিম রিসোর্টে উঠেন। রিসোর্টের দুই কর্মচারী টিস্যু বক্সের ভেতরে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে দম্পতির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে। ঘটনার কিছু দিন পর একটা মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর ইমো নম্বরে ফোন করে জানায়, ‘তাদের নোংরা ছবি ও ভিডিও আছে এবং ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে’ বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়।
এর পর গত বছরের ২১ অক্টোবর ‘নাদিরা আক্তার রুমি’ নামে একটা আইডি থেকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ভুক্তভোগীর কাছে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পাঠায়। পরে ওই নাম্বার থেকে বাদীর ইমো নম্বরে কল করে হুমকি দিয়ে জানায়, ‘এই ছবি ও ভিডিও ফেরত পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা তাদের দিতে হবে।’
যদি টাকা দেওয়া না হয়, তা হলে তাদের এই ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দিতে থাকে তারা। এদিকে এমন স্পর্শকাতর ঘটনায় ওই দম্পতি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি তাদের সঙ্গে আপসের চেষ্টা চালিয়ে যান। পাশাপাশি আইনের আশ্রয় নেবেন কি না চিন্তা করতে থাকেন।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের উপপিরদর্শক (এসআই) আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাদীর কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ইতোমধ্যে তারা ফেসবুকে তাদের বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের ম্যাসেঞ্জারে তাদের নোংরা ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে থাকে। নিরুপায় হয়ে এই দম্পতি অবশেষে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের শরণাপন্ন হন।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ জব্দ করে দম্পতির বিভিন্ন ছবি ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে আসামিরা পুলিশের কাছে তাদের অপকর্মের স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
তামিম রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী হারুণ মিয়া বলেন, কর্মচারীরা কী করেছে, তা আমার জানা নেই। তারা একসময় আমার এখানে ছিল, এখন নেই।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) হুমায়ুন বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা দ্রুত মূল দুই আসামিকে গ্রেফতার করি। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। আসামিদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। এ ঘটনায় মালিকপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না তা তদন্ত করে বের করা হবে বলে।
ওমর ফারুক নাঈম/এমএসআর