সেকেন্দার-ছাফিয়াদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিল পুলিশ

'আমি অন্ধ মানুষ, দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করি। আমার থাকার কোনো ঘর-বাড়ি নেই। স্কুলের বারান্দায় ঘুমাইতাম। এখন পুলিশ আমাকে সুন্দর একটা ঘর তৈরি করে দিয়েছে। ঘর পেয়ে আমি অনেক খুশি। আল্লাহর কাছে পুলিশের জন্য দোয়া করি।
বহু বছর পর মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়ায় এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সেকেন্দার আলী। পঞ্চাশোর্ধ্ব এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পেশায় ভিক্ষুক। থাকেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। 
সেকেন্দার আলীর মতো জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন করে গৃহহীনকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে রংপুর জেলা পুলিশ। নতুন ঘর পাওয়ার তালিকায় রয়েছে রংপুর সদর এলাকার ভিক্ষুক বিধবা ছাফিয়া বেগম (৩৫), গঙ্গাচড়ার ভিক্ষুক বিধবা পেয়ারী বেগম (৫৩), তারাগঞ্জের ভিক্ষুক বিধবা মকছু বেগম (৪৮), বদরগঞ্জের গৃহকর্মী রুপিয়া খাতুন (৪২), মিঠাপুকুরের প্রতিবন্ধী গোলাম মোস্তফা (৪৮), পীরগাছার বিধবা দিনমজুর আছমা খাতুন (৫৪), কাউনিয়ার বিধবা রাবেয়া খাতুন (৫২) এবং পীরগঞ্জের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক সেকেন্দার আলী (৫০)।
জনবান্ধব ও কল্যাণমুখী পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মুজিববর্ষে বাংলাদেশ পুলিশ এ মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
রোববার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রংপুরের আট উপজেলার অসহায় গৃহহীন ৮ পরিবারকে গৃহ হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠান থেকে দেশের প্রতিটি থানায় স্থাপিত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জেলার নারী, শিশু, বয়স্ক ডেস্কে সেবা প্রদানকারী অফিসার, সেবা গ্রহণকারী নাগরিক ও নতুন গৃহ পাওয়া উপকারভোগীদের অনুভূতি শোনেন।
পীরগঞ্জ থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ডেস্ক থেকে সেবা গ্রহণকারী লাইজু বেগম বলেন, আমার স্বামী ট্রাকড্রাইভার। গত ১৫ মার্চ আমার ৪ বছরের শিশু সন্তান লাজিম অপহরণের শিকার হন। অপহরণকারী আমার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। আমি তখন পীরগঞ্জ থানায় গিয়ে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে বিষয়টি জানালে পুলিশ মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে আমার ছেলেকে উদ্ধার এবং আসামিকে গ্রেফতার করে। আমি এ ডেস্ক থেকে পাওয়া দ্রুত সেবা ও আন্তরিকতায় খুবই খুশি।
এ সময় রংপুরের পীরগঞ্জ থানা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী প্রমুখ।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না'। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। রোববার প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০০টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়।
এ কর্মসূচির আওতায় রংপুর জেলার আটটি উপজেলায় একটি করে অসহায় গৃহহীন পরিবারকে দৃষ্টিনন্দন, মজবুত ও পাকা গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ৪১৫ বর্গ ফুট আয়তনের দৃষ্টিনন্দন প্রতিটি গৃহ পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গৃহহীন পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও উপার্জনে অক্ষম, অতিবৃদ্ধ ও পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য নেই, এমন পরিবার অথবা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস