হাঁটুসমান কাদায় সড়কে এ কী নির্মম হাবুডুবু
লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার সংযোগস্থলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ। এই ব্যারেজ রক্ষার্থে তিস্তার বাম তীরে লালমনিরহাট অংশে ফ্লাড বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়। এটি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থেকে ডিমলা হয়ে নীলফামারী যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পাথর ও ইট উঠে গিয়ে কেবল কাদামাটি আছে। এতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি।
ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারীর ডিমলা খড়িবাড়ী সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা নদী। এরপর লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে এ নদী।
ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার এক তরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়।
গত বছরের ২০ অক্টোবর হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ওই দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প রক্ষায় নির্মিত সড়কের (ফ্লাড বাইপাস) ৩০০ মিটারের মতো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় লালমনিরহাটের সঙ্গে নীলফামারীর সড়ক যোগাযোগ। পরে জরুরি বরাদ্দ নিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার করে পাউবো।
কিছুদিন না যেতেই সড়কটি আবার এবড়োথেবড়ো হয়ে যায়। এরপর বাইপাস সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি। সড়কটিতে বালু ও মাটি ভরাটের কারণে শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির পুরু স্তর পড়ে যায় আর বৃষ্টিতে পুরোটাই কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ফলে এই সড়কে চলতে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের চরম অবহেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফ্লাড বাইপাস সড়কে সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই ফুট পুরু কাদামাটিসহ ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে কিছু হালকা ও ভারী যান। অটোরিকশা ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন উল্টে গিয়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের চরম অবহেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে বেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। শুধু তাই নয়, রোগী পরিবহন ও জরুরি কোনো প্রয়োজনে দ্রুত যাতায়াত করা যায় না এ সড়ক দিয়ে। দ্রুত সংস্কার করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।
কথা হয় তিস্তা ব্যারেজ এলাকার বাসিন্দা আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে কাদার জন্য চলাচলই করা যায় না। গাড়ির চাকা আটকে যায় কিংবা পিছলে পড়ে উল্টে যায়। আবার বৃষ্টি না হলে ধুলার জন্য চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়ে এই রাস্তা দিয়ে।
রাস্তা দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখছেনই তো কীভাবে গাড়ি সব আটকে আছে।
এই সড়কে নিয়মিত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালান মজিবর মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটু বৃষ্টির কারণে রাস্তার যে অবস্থা, এখানকার মানুষ অনেক কষ্ট করছে, সীমাহীন কষ্ট, বলে বোঝানো যাবে না। সরকারের কাছে বিনীত আবেদন, অন্তত কিছু ভাঙা ইটের খোয়া যদি এই রাস্তায় ফেলা যেত, তাহলেও গাড়িগুলো কোনোরকমে চলত, মানুষের এত দুর্ভোগ হতো না।
ট্রাকচালক সবুজ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একদিন হালকা বৃষ্টি হলে গাড়ি নেওয়া যায় না। রাস্তায় দেখেন কত গাড়ি আটকে আছে, যানজট লাইগা রইছে। খালি গাড়ি নেওয়া যায় না। এটা বন্যার সময় ভেঙে গিয়েছিল। তারপর বালু দিছে খালি, আর কিছু করে নাই।
দোয়ানী এলাকার সহিদার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাস্তার এক কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো গাড়ি চলছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার যা অবস্থা, সামনে বেশি বৃষ্টি হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।
হাটে ছাগল বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলা তো বৃষ্টি নাই, তারপরও দেকো কী অবস্থা। আর যখন বৃষ্টি হইবে তখন তো চলাফেরা আরও কষ্ট হইবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাড বাইপাস সড়ক সংস্কারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হবে। বন্যার আগেই সড়কটি সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০০১ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের ওপর দিয়ে সংযোগ সড়কটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে সে সময় ভারী যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায় করা হতো। এই সংযোগ সড়কের ফলে বিভিন্ন জেলার দূরত্ব ও সময় অনেকটা কমে আসে। লালমনিহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক বিপ্লব ঘটে। তবে ব্যারেজ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর ওই সড়ক দিয়ে অধিক ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়।
শরিফুল ইসলাম/এসপি/জেএস