মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে পরীক্ষায় বসলেন তারা

গলায় ঝোলানো ভাঙা হাত। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। ভয়াল সেই স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে। এরই মধ্যে শনিবার আবারও পরীক্ষায় বসতে হয়েছে মাস্টার্সের ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরীক্ষার্থী সাইফুর রহমানকে। শনিবার যশোর সিটি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। পরীক্ষায় অংশ নিলেও তাকে নিতে হয়েছে শ্রুতি লেখকের সাহায্য।
সাইফুরের মতো সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী আবদুর রহিমও হাতে ক্যানোলা, ব্যান্ডেজ ও মুখে ক্ষত নিয়ে আহত শরীরে পরীক্ষায় বসেছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে সাইফুর ও রহিম পরীক্ষায় বসলেও চিরবিদায় নিয়েছেন তাদের ছয় সহপাঠী।
বলছিলাম বুধবার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বারোবাজারে বাস দুর্ঘটনায় এমএম কলেজের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছয়জন নিহত ও ১৫ জন আহতের ঘটনা। নিহতদের মধ্যে রয়েছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তিনজন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুইজন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন পরীক্ষার্থী।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৬ শিক্ষার্থী শনিবার যশোর সিটি কলেজ ও যশোর সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে একজন শ্রুতি লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়েছে। গুরুতর আহত আরও দুইজন পরীক্ষা দিতে আসতে পারেনি বলে জেনেছি। পরীক্ষা চলাকালে এমএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল মজিদ স্যার কেন্দ্রে গিয়ে অসুস্থ পরীক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়েছেন। একই সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের পক্ষ থেকে নিহত পরীক্ষার্থী হারুন অর রশিদ ও ইউনুস আলীর গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম আমরা। নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছি। তাদের কবর জিয়ারত করেছি। নিহতের বাবা-মাকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পায়নি। আমার মনে হয়েছে দুটি পরিবারের ভবিষতের আলো নিভে গেছে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ কত ভারী সেটি চোখে না দেখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
এদিকে, নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় শনিবার বাদ জোহর এমএম কলেজ মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহের বারোবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের ৬ পরীক্ষার্থী নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী।
নিহতরা হলেন- মাস্টার্সের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাথকু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুস আলী, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রণজিত কুমার দাসের ছেলে সনাতন কুমার দাস, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিনদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ। মাস্টার্সের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দিংদহ গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে শারমিন আক্তার রেশমা ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদহ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে অলিউল রহমান শুভ এবং মাস্টার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মুস্তাফিজুর রহমান কল্লোল।
জাহিদ হাসান/এসপি