উত্তরের ঈদযাত্রায় প্রস্তুত হচ্ছে সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ২২ জেলার অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় এই মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি থাকে নিত্যসঙ্গী। মহাসড়কের নলকায় নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ না হলে এবারের ঈদযাত্রায়ও ভোগান্তি থাকবে।
তবে ঈদের আগে নলকায় নতুন সেতুর অন্তত এক লেন খুলে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি সংস্কার করা হচ্ছে মহাসড়কের খানাখন্দ। এ ছাড়া বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার হোসাইন লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. এখলাছ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কের যানজট ও ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা ঈদের ছুটির আগেই নলকার নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেব। মহাসড়কের খানাখন্দগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করেছি, যা ঈদযাত্রার আগেই শেষ হবে। আশা করছি ঈদে ঘরমুখী মানুষ এবার কোনো ভোগান্তিতে পড়বে না।
মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়েই চলছে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। এর মাঝে অনেক জায়গায় এক লেন বন্ধ করে কাজ করা হচ্ছে। ফলে বাকি লেন দিয়েই চলতে হচ্ছে দুদিকের গাড়ি। ঈদের আগেই অন্তত সড়ক মেরামতের কাজ শেষ না হলে ঈদযাত্রায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে মহাসড়কের এই অংশ।
তবে ঈদের আগেই সড়ক পুরোপুরি খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটের হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসচালক মোখলেছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে মহাসড়কের যে অবস্থা, যদি নলকা সেতু খুলে না দেওয়া হয় এবং মহাসড়কের কাজ শেষ না হয়, তাহলে এই ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। সেই সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়তে হবে পরিবহনশ্রমিকদের। বাসের টাইম শিডিউলও ঠিক থাকবে না।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম তরফদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঈদের আগে নলকার নতুন সেতুর এক লেন ছেড়ে দেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, খানাখন্দ ও উঁচু-নিচু জায়গাগুলোয় ইট, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে সমতল করে মহাসড়কের সব লেন খুলে দেওয়া হবে। আশা করি সিরাজগঞ্জ অংশে মহাসড়কের কোথাও কোনো লেন বন্ধ থাকবে না।
সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. সালেকুজ্জামান খান সালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের অন্তত ১০ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও ট্রাফিক সার্জেন্টের পাশাপাশি ৯ জন সহকারী সার্জেন্টসহ শতাধিক ট্রাফিক সদস্য কাজ করবেন। ২০ রজমানের পর থেকে মহাসড়কে কাজ করবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আমরা মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করব।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, এবার মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করতে ইতোমধ্যে পুলিশের ৫০ সদস্য প্রস্তুত আছেন। এ ছাড়া পুলিশের আরও ২৫০ সদস্য চেয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

মহাসড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি সাধারণত হয় না। আর হলেও সেটা বরদাশত করা হবে না। মহাসড়কে তিন চাকার যানের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দিচ্ছি। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে আমরা এ বিষয়ে আরও কঠোর হব।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিশেষ করে নলকা সেতু এলাকা নিয়ে বেশি চিন্তিত। আমরা ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছি। ঈদের এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত আমরা সেখানকার অবস্থা ও কাজের সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে আমরা চাহিদা অনুযায়ী ফোর্স দেওয়ার চেষ্টা করব।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ২১ রমজান থেকে জেলা পুলিশ কাজ শুরু করবে। পুরোদমে কাজ শুরু হবে ২৩ রমজান থেকে। যা চলবে ঈদের পঞ্চম দিন পর্যন্ত। তিন শিফটে ভাগ হয়ে ৮ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ দায়িত্বে থাকবে। ৪৫০ থেকে ৫০০ জন পুলিশ সদস্য এখানে কাজ করবেন। পাশাপাশি মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত আক্রান্ত গাড়ি সরিয়ে নিয়ে মহাসড়ক ক্লিয়ার রাখতে আলাদা টিম কাজ করবে।
এনএ/জেএস