৩ বছরে শত কোটি টাকার মালিক হাজী রবিউল

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব অভিযোগে ২১ এপ্রিলের মধ্যে সম্পদের বিবরণী দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ে দাখিলের জন্য গত ১২ এপ্রিল নোটিশ দেওয়া হয়েছিল তাকে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালের দিকে তিনি দুদক অফিসে হাজির হয়ে সময় চাইলে দুদক তা মঞ্জুর করে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাকারিয়া।
রবিউল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকায়। তিনি কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ আসে। ২২টি অভিযোগের বিষয়ে তথ্য দিয়ে বলা হয়, তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেওয়ার পরবর্তী তিন বছরে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
এ বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল সাবেক চেয়ারম্যান রবিউলকে চিঠি দেন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ওই কার্যালয়ে হাজির হতে বলেন। রবিউল বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে গিয়ে আরও কিছুদিন সময় চেয়ে আবেদন করেন। দুদক তার আবেদন গ্রহণ করে এক সপ্তাহ সময় দেয়।

সূত্র আরও জানায়, নোটিশে রবিউল ইসলামের কাছে তার স্ত্রী ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্টের ফটোকপি; তাদের এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের (জমি, প্লট, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, খামার, ফার্ম ও অন্যান্য) দলিল, অনুমোদিত নকশা, লিজ/বরাদ্দ/ক্রয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র; অস্থাবর সম্পদ (সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, বন্ড, শেয়ার বিনিয়োগ, গাড়ি ও অন্যান্য) ক্রয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং ব্যাংক হিসাব ও ডিপোজিট স্কিমের (যদি থাকে) বিবরণী; তাদের নামে (ব্যক্তিগত/ব্যবসায়িক) শুরু থেকে সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের সার্টিফায়েড কপি; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য থেকে গৃহীত ঋণ/দায়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রবিউল ইসলামের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোটিশে রবিউলসহ তার স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয়েছিল। তিনি বৃহস্পতিবার হাজির হলেও সম্পদের বিবরণী জমা দেননি। এর জন্য আরও এক সপ্তাহ সময় নিয়েছেন। ২০১৭ সালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেওয়ার পরবর্তী তিন বছরে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাকারিয়া জানান, রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছি আমরা। অভিযোগের ভিত্তিতে সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য তাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদক অভিযোগটি তদন্ত করে দেখছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দুদক।
রাজু আহমেদ/এনএ