সাতক্ষীরায় কলেজছাত্র নির্যাতন : মামলা হলেও গ্রেপ্তার নেই

সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের টর্চার সেলে কলেজছাত্রকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে মামলার প্রধান আসামির ভাইয়ের সঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই চন্দন কুমার সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে তালার মাঝিয়াড়া বাজারে গোপন বৈঠক করেছেন। এতে মামলার আসামি গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আসামির ভাই সৈয়দ খালিদ হাসানের সঙ্গে গোপন বৈঠকের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই চন্দন কুমার বলেন, আমি রাতে ওই দিকে গিয়েছিলাম। তখন খালিদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন একটু কথা হয়। কী কথা হয়েছিল, সেই ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে চাননি তিনি।
এদিকে মামলার নথিভুক্ত হওয়ার পর আসামি ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎসকে তালা বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে পুলিশ তাকে এখনো আটক করেনি।
এ বিষয়ে কলেজছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, থানায় মামলা নিয়ে গিয়ে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছিল আমাকে এখানেই মারবে ইদ্রিস ও শাহিনুর রহমান। তারা এলাকায় দালাল নামে পরিচিত। থানায় ১২টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেও মামলা নেয়নি পুলিশ। অবশেষে বাড়িতে ফিরে আসি। পরদিন সোমবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ৩টার দিকে থানায় মামলা রেকর্ড করেছে। এখনো কোনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আসামিরা এখনো পলাতক রয়েছে। আসামির ভাইয়ের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন হতে পারে আসামির বাড়ি চিনিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি কথা বলেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের দালাল সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব (২৫), হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পাশের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের অশোক দাসের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)।
উল্লেখ্য, রোববার (২৪ এপ্রিল) তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে টর্চার সেলে নিয়ে তন্ময়কে বেলা ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নির্মম নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মাথা ন্যাড়া করে বিবস্ত্র অবস্থায় মারপিট ও ভিডিও ধারণ করে। এরপর বাড়িতে ফোন দিয়ে মায়ের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। এ প্রান্তের মারপিটের চিৎকার ফোনের ও প্রান্তে থাকা মাকে শোনাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই থানায় মামলা দেন কলেজছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান। তবে মামলা নেয়নি তালা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ। এ সময় থানার মধ্যেই আজিজুর রহমানকে হুমকি দিতে থাকেন প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতার বাবা দালাল সৈয়দ ইদ্রিস ও শাহিনুর রহমান।
এদিকে এ ঘটনায় সৈয়দ আকিবকে তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের সঙ্গে কথা বলেন ও খোঁজখবর নেন। তার পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।
আকরামুল ইসলা/এনএ