ফুটপাতেই ভিড় জমাচ্ছেন পোশাকের কারিগররা

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি অনেকে। এবার পরিস্থিতি পাল্টেছে। অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা। ফলে এবার পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়িতে ছুটছে মানুষ। পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনছে নতুন পোশাক।
এই আনন্দ শামিল হতে পিছিয়ে নেই পোশাক শ্রমিকরাও। তারা বড় বড় মার্কেটে নিজেদের তৈরি পোশাক কিনতে না পারলেও ভিড় জমাচ্ছেনে ফুটপাতের মার্কেটে। কিনছেন তাদের পছন্দের পোশাক।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সাভার, বাইপাইল, জামগড়া, বলিভদ্র ও জীরানিবাজার এলাকার ফুটপাতে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় মার্কেটসহ ফুটপাতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সামর্থ অনুযায়ী যে যার মতো কিনছেন তাদের পছন্দের পোশাক। তবে ফুটপাতের বেশির ভাগ ক্রেতাই পোশাকের কারিগর। নিম্ন আয়ের মানুষ হওয়ায় ফুটপাতই যেন তাদের বিশ্বস্ত মার্কেট।
সাভারের ফুটপাতে পরিবারের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন পোশাকশ্রমিক মর্জিনা। তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করি। আমরা যেসব পোশাক তৈরি করি তা আমরা কোনো দিনই ব্যবহার করতে পারব না। কারণ এতো দামি পোশাকের মানুষ আমরা না। আমরা যে টাকা আয় করি তা দিয়ে মার্কেটে কেনাকাটা করতে পারি না। এবার পুরো মাসের বেতনও পাইনি। অর্ধেক মাসের বেতন ও বোনাস পেয়েছি। এই টাকার মধ্যেই পুরো পরিবার-পরিজনের ঈদ আনন্দ লুকিয়ে আছে। তাই দামি ব্র্যান্ডের পোশাকের কারিগর হয়েও আজ আমি ফুটপাতে। তার পরও কাপড়ের বেশি মূল্য আমাকে হতাশ করেছে।

আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফুটপাতে কেনাকাটা করা শ্রমিক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি সব সময় এই ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করি। এখানে সাধ্যের মধ্যে আমি আমার চাহিদা পূরণ করতে পারি। তবুও অনেক কষ্ট করতে হয়। এবার তুলনামূলক কাপড়ের দাম অনেক বেশি। আমাদেরও ইচ্ছা করে বড় মার্কেটে কোনাকাটা করার। অল্প বেতনে চাকরি করায় তা আর হয়ে ওঠে না। সব কিছুরই দাম বেশি। আমাদের বোনাস কম। বোনাসের টাকা দিয়ে মার্কেটে কেনাকাটা করলে একজনেরই হবে না। তাই পরিবারের চাহিদা মেটাতে ফুটপাতই ভরসা।
ফুটপাতের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুটপাতে অনেক ক্রেতা। তবে বিক্রি সে তুলনায় অনেক কম। অনেক আশা ছিল দুই বছর পর এবার জমে উঠবে বেচাকেনা। সব ধরনের পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় তেমন বেচাকেনা নেই। ক্রেতারা কম দাম বলে চলে যায়। বেশি টাকা দিয়ে কিনে কমে তো আর বিক্রি করতে পারি না। এ কারণে এবার বিক্রি অনেক কম। অল্প লাভ হলেও তাই এবার বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরেক বিক্রেতা আসাদুজ্জামান বলেন, করোনার কারণে প্রায় দুই বছর পর এবার মার্কেটে কিংবা ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। তবে পাইকারী দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে পোশাকের দাম। আগে একটা লুঙ্গি কিনেছি ২৫০ টাকায়, আর বিক্রি করেছি ৩৫০ টাকা। সেই লুঙ্গি এবার কিনতে হয়েছে ৪০০ টাকায়। তাহলে আমার বিক্রি করতে হয় ৫৫০ টাকায়। কিন্তু ভাল কোম্পানির লুঙ্গিই মার্কেটে ৫৫০ টাকা হলে পাওয়া যায়। ক্রেতারা তো আর ফুটপাত থেকে মার্কেটের দামে কিনবে না। তাই এবার আশার মুখে বালি পড়েছে।
আরএআর