একটি মানবিক উদ্যোগ বদলে দিতে পারে রাশিদার জীবন
মাদারীপুরের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায় অসংখ্য মানুষ ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলা অনেক মানুষই ঘাট এলাকায় যাতায়াত করা মানুষের দেওয়া কিছু সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। তাদেরই একজন হলেন রাশিদা বেগম (৩৫)। অচল দুটি পা নিয়ে ঘাট এলাকা ঘুরে অন্যের সহযোগিতায় পাওয়া আয় দিয়েই চলে রাশিদার সংসার।
রাশিদা বেগম মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভা এলাকার লোকমান শিকদারের মেয়ে। ৭ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একটি পা অচল হয়ে যায় তার।
পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার অভাবে আর ভালো হয়নি তার পা। অসুস্থতার পাশাপাশি পরিবারের অস্বচ্ছলতার ফলে পড়াশোনাও করা হয়নি রাশিদার। ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয় একই এলাকার ভ্যানচালক রাসেল মাদবরের (৩৮) সাথে।
স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে রাশিদার সংসার। মেয়ে মারিয়া আক্তার (১৩) ও ছেলে মাহিম জাজিরা এলাকায় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করে। সংসার ও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যেতে পারছিলেন না রাশিদা। বেশি রোজগারের আশায় স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে চলে আসেন কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়।
কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে তাদের বসবাস। স্বামী রাসেল মাদবর বাসের হেল্পারি করেন। স্বামীর আয়ের টাকায় ভালোই চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন কোনো কাজ করতে পারছেন না তিনি।
স্বামীর অসুস্থতার পরই রাশিদার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার মাথার ওপর। সংসার চালানোর কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই অন্যের কাছে হাত পাততে হয় তাকে। অন্যের সহযোগিতায় কোনোরকম সংসার চালান রাশিদা। টাইফয়েডে এক পা হারানোর পর এক দিন লঞ্চে উঠতে গিয়ে টার্মিনালের পিলারে চাপা খেয়ে রাশিদা বেগমের অন্য পাটিও ভেঙে যায়।
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন তার দুটি পা-ই বিকল। দুই হাতে ভর করে বিশেষ কায়দায় লঞ্চে উঠছেন, আবার কখনো ফেরিতে উঠে যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী এমারত মাদবর বলেন, রাশিদাকে এখানকার সবাই চেনে। তিনি অনেক অসহায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে ঘাট এলাকায় দেখা যায়।
রাশিদা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষের কাছে চেয়ে যা পাই, তা দিয়েই আমার সংসার চলে। স্বামী অসুস্থ, কাজ করতে পারে না। সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। এখন শুনতেছি ব্রিজ হয়ে গেলে লঞ্চ-ফেরি থাকবে না। তখন কীভাবে চলব! এখন যে কয়ডা টাকা পাই, তখন তো তাও পাব না। সংসার চালাব কীভাবে।
শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন (সোহেল বেপারী) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখনো তার বিষয়ে জানি না। এমন কেউ আমার কাছে এখনো আসেনি। উনি যেহেতু অসহায়, সুতরাং তিনি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা না হলেও আমি তাকে সহযোগিতা করব।
নাজমুল মোড়ল/আরআই