অশনির প্রভাবে খুলনায় বৃষ্টি, বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় উপকূলবাসী
০৯ মে ২০২২, ০৫:০৪ পিএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। অশনির প্রভাবে খুলনাজুড়ে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে দমকা বা ঝড়ো বাতাস নেই। সোমবার (৯ মে) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এর আগে গত বছর সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও ইয়াসের দুর্ভোগে পড়ে উপকূলের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা নোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়। বিধ্বস্ত হয় হাজার হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, গাছপালা, গবাদি পশু, মৎস্য ঘের ও জমির ফসল। সর্বস্বান্ত হয় জনপদের মানুষ। ফলে ঘূর্ণিঝড় তাদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। এখন অশনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে উপকূলবাসী।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিন-৯ অনুযায়ী, সোমবার দুপুর ১২টায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘর্ণিঝড় মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এখনো মোংলা সমুদ্র বন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উপকূলে আঘাত হানবে। এর প্রভাবে খুলনায় সোমবার বেলা ১১টা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত খুলনায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ মে) পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে। বুধবার (১১ মে) এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তখন কিছুটা জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে।
নগরীর খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা হাসানুর রহমান বলেন, বেলা ১১টা থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। এখন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টি হলেও কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি। ঈদের দিন বৃষ্টি হওয়ার পর আজ বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝখানে টানা কয়েকদিনের গরমের পর বৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশটা ঠান্ডা রয়েছে।
কয়রা উপজেলার সাংবাদিক নিতিশ সানা জানান, কয়রার উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ। আম্ফান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর কাজ এখনো চলমান রয়েছে। সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই সুপার সাইক্লোন অশনির আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উপকূলবাসী।
তিনি জানান, উপজেলায় বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, মদিনাবাদ তফসিল অফিসের সামনে থেকে হামকুড়ার গোড়া, মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতির অফিস ও দশালিয়া, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের কয়রায় ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বাঁধ গাববুনিয়া, মাটিয়াভাঙ্গা (কোবাদক ফরেষ্ট অফিস থেকে ঘড়িলাল বাজার), আংটিহারা (সুইচ গেট থেকে পুলিশ ফাঁড়ি), পাতাখালী (খাশিটানা বাঁধ থেকে জোড়শিং বাজার)।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের বাসিন্দা কামাল মোল্লা জানান, সুপার সাইক্লোন আইলায় তার ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর নতুন করে আবার একটা ঘর বাঁধেন তিনি, সেটিও নদী ভাঙনে বিলীন হয়। তখন তিনি চলে যান রাঙামাটি। ৫ বছর পর ফিরে এসে আবারও মাথা গোঁজার মত একটা ঘর বেঁধেছেন। কিন্তু তার বাড়ির সামনে দিয়ে ভাঙন লেগেছে। যে কোনো সময় জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই অশনির আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিনি। এবার ভাঙলে আবারও ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে।
একই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, নদীতে একটু জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে লোকালয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে। ২ নম্বর সংকেত চলছে। জোড়শিং ট্যাকের মাথা পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কাজ না করলে, অশনি আঘাতে এখান থেকে ভেঙে হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের, ফসলি জমি ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হতে পারে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিত কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এতে ঝুকি কম। তবুও প্রত্যেক উপজেলায় সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২ নম্বর সংকেত থেকে ৪-এ উঠলে তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, খুলনায় ৩৯৬টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। যেগুলোতে ২ লাখ ৯৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। প্রয়োজন হলে সেগুলো খুলে দেওয়া হবে।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর