গরিব-দুঃখী মানুষের সব সমস্যা সমাধান করে দেন ডিসি

সাধারণত দরিদ্র ও অসুস্থ মানুষ তার কাছে ছুটে আসেন। নানা জনের নানা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দরিদ্রদের সব ধরনের সহায়তা দেন। এজন্য সবার পছন্দের মানুষ ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকার।
মানবিক সেবা দেওয়ায় অসুস্থ মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন অতুল সরকার। ক্রমেই জেলা কার্যালয়ে এসব মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। কারও কিডনিতে সমস্যা, কারও ক্যানসার, কারও বিষব্যথা, কারও চোখে সমস্যা, কারও জটিল সমস্যা। এসব সমস্যা নিয়ে সবাই ডিসির কাছে হাজির হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার দরিদ্র অসুস্থ মানুষের কথা শুনছেন। কাউকে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন ক্যানসার হাসপাতালে, কাউকে কিডনি চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালে পাঠাচ্ছেন। কাউকে পাঠাচ্ছেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে। আবার কাউকে পাঠাচ্ছেন সদর হাসাপাতালে।
প্রতিনিয়ত সেবা দেওয়ার জন্য অসংখ্য মানুষ হাজির হচ্ছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। জানাচ্ছেন তাদের সমস্যা। ছোট ছোট অসুস্থতাজনিত সমস্যার জন্য জেলা প্রশাসক অতুল সরকার নিজ উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। সেবাপ্রার্থীদের দু’চারজন আবার অর্থ নিতে অনিচ্ছুক। তাদের দাবি ওষুধ কিনে দিতে হবে। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক তাদের ওষুধ কিনে দিচ্ছেন। জটিল রোগীদের চিকিৎসায় বেশি টাকা খরচ হতে পারে; তাই সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করছেন।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে অতুল সরকারের কাছে হাজির হয়েছেন আখি আক্তার। ফরিদপুর জেলা সদরের উত্তর দিকে একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। পড়াশোনা করছে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে। বাড়িতে আখির ছোট দুই ভাই রয়েছে। একজন এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অন্যজনের বয়স তিন বছর। তাদের বাবা অসুস্থ। কাজকর্ম করতে পারেন না। জায়গাজমি নেই। কোনোমতে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পেলেও বাবার চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই অসুস্থ বাবাকে নিয়ে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে হাজির। জেলা প্রশাসক তার কথা শুনে এবং অসুস্থ বাবাকে দেখে আর্থিক সহায়তা দেন।
শুধু আখির বাবাকেই নয়, জেলা সদরের তাম্বুল খানা-কুজুর দিয়ার বিলকিছ বেগম, হালিমুন খাতুন, ভাটিলক্ষ্মীপুরের রেহেনা খাতুন, কানাইপুর পশ্চিম গঙ্গাবদ্দীর আব্দুর ছাত্তার শেখ, মালাম দরানি, নিখরদী পশ্চিম বিলনালিয়ার মাহমুদুল হাসান, আবদুল্লাহ সাকিন, চর কমলাপুরের রাশেদা, ববিতা, বিল মামুদপুরের লিলি বেগম, গোয়ালচামটের দীপক চন্দ্র শীল, কবিতা রানী শীল, বিহারি কলোনির হাওয়া বেগম, বোয়ালমারী উপজেলার লষ্করদিয়ার অমল বিশ্বাসকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন ডিসি।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, একটা সময় অফিস কক্ষে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হতো। এ শুনানিতে জেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসতেন। এদের কেউ অল্প বয়সী, কেউ বয়স্ক।
তিনি বলেন, অফিস কক্ষের মধ্যে ছিমছাম পরিবেশে অনেকে কথা বলতে সংকোচ করতেন, কেউ কেউ তাদের সকল সমস্যা খুলে বলতে পারতেন না। এখন প্রকাশ্যে গণশুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে সংকোচ থাকছে না। তাদের মনের কথা খুলে বলছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সুশাসনে গড়ি, সোনার বাংলা’ স্লোগান সামনে রেখে কাজ করছি আমরা। চেষ্টা করছি, সাধারণ মানুষের কথা শুনে সেবা দিতে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত এক বছরে গণশুনানিতে প্রায় সাত হাজার মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের সবার সমস্যা সমাধান করেছেন জেলা প্রশাসক। দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা।
জেলা প্রশাসক হিসেবে ফরিদপুরে অতুল সরকার যোগদানের পর থেকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসক শুরু করেছেন প্রকাশ্যে গণশুনানি। নিজের অফিস কক্ষের বাইরে খোলা জায়গায় গণশুনানিতে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের পথ বলে দিয়ে আপনজনে পরিণত হয়েছেন। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সমস্যার সমাধান মিলছে হাজার হাজার মানুষের।
তার অফিসে গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক কিংবা দিনমজুর গেলেও হাসিমুখে কথা বলেন। ফরিদপুরে যোগদানের পর থেকে একের পর এক ব্যতিক্রমী চিন্তা চেতনায় আকৃষ্ট করলেও এবার এক অকল্পনীয় নজির স্থাপন করেছেন এই জেলা প্রশাসক। সপ্তাহের বুধবার বেশি সময় নিয়ে প্রকাশ্যে তিনি সাধারণ মানুষের কথা শোনেন। সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করেন।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার সাধারণত প্রতিদিন জনসাধারণের কথা শোনেন। তবে বিশেষভাবে প্রতি বুধবার দীর্ঘ সময় নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জমির একসনা বন্দোবস্ত প্রাপ্তি, আইনগত সহায়তা, আর্থিক সহায়তা, টিআর, জিআর. সরকারি ডেউটিন, চিকিৎসা সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তি, বিধবা ভাতা প্রাপ্তি, বাল্যবিয়ে রোধ, জমিজমা বিরোধ সংক্রান্ত, ঘর মেরামত, পড়ালেখার খরচ চালানো, শীতের পোশাক প্রাপ্তি, ধর্মীয় কার্যাদিসহ বিভিন্ন বিষয় জেলা প্রশাসককে জানান গরিব-দুঃখী মানুষ। জেলা প্রশাসক সবার সমস্যা সমাধান করে দেন।
বি কে সিকদার সজল/এএম