কলেজশিক্ষকের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় মামলা
কুষ্টিয়ায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল বিশ্বাসের (৫২) ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১ জুন) কুষ্টিয়া মডেল থানায় আহত কলেজশিক্ষকের ছেলে বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার শালঘর মধুয়া গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে জাফর, মৃত ময়নুদ্দিনের ছেলে লিটন ও সামিউল করিম আন্নু, মৃত মনসুর আলীর ছেলে নিজাম ও রফিকুল, জোয়াদ আলীর ছেলে রতন, গোপাল শেখের ছেলে আমানত ও আরিফুল, সোলেমানের ছেলে মোশারফ হোসেন মশা, মৃত মোকাদ্দেস হোসেনের ছেলে নাজিম উদ্দিন ও আব্দুর রহমান, আব্দুল খালেকের ছেলে সামাদ, আইয়ুব আলীর ছেলে মুহাইমেন, সামেদ আলীর ছেলে হালিম, মৃত আজমত আলীর ছেলে আমজাদ, মৃত আফজাল শেখের ছেলে মিজানুর, মৃত সরোয়ার হোসেনের ছেলে সুজন, মৃত গনির উদ্দিনের ছেলে হাসানুজ্জামান চান্নু, মজিবর রহমানের ছেলে জুলফিকার, আজাহার আলীর ছেলে শাকিল, মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে আব্দুল লতিফ, আতিয়ারের ছেলে আলমগীর, সানাউল্লাহ ছেলের শরিফুল, মজিবর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর, আব্দুল খালেকের ছেলে পলাশ এবং গোপাল শেখের ছেলে মুকুল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে , গত ৩১ মে দুপুরে কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামের আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজ থেকে কুষ্টিয়া শহরে ফিরছিলেন তোফাজ্জেল বিশ্বাসের। এ সময় সদর উপজেলার বংশীতলা নতুন ব্রিজের ওপর রাস্তার কাজে ব্যবহৃত রোলার মেশিন দাঁড়ানো ছিল এবং সেই রোলার মেশিনের পেছনে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আগে থেকেই এজাহার নামীয় আসামিরা লুকিয়ে ছিল। ঘটনাস্থলে তোফাজ্জেল হোসেন মোটরসাইকেল যোগে পৌঁছা মাত্রই পূর্বশত্রুতার জের ধরে তার পথরোধ করে আসামিরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে তার ডান হাতের কবজি কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে হয়ে যায়। কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ওই শিক্ষকের সঙ্গে থাকা দেড় লাখ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় আসামিরা।
আহত শিক্ষকের ছেলে নাজমুস সাকিব হাসিব বলেন, স্থানীয় রুকি শেখের তিন সন্তান ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার আশ্রয়ে থাকেন। কিছু দিন আগে হঠাৎ রুকি এসে তার সন্তানদের তার কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু তার স্ত্রী ও সন্তানরা রুকির কাছে না গিয়ে আমার বাবার কাছেই থেকে যায়। এনিয়ে আমার বাবার সঙ্গে রুকির সামাজিক বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরেই রুকি শেখ স্থানীয় লিটন, জাফর, আরিফুল, সামাদ, নাজিমসহ আরও অনেককে নিয়ে বাবার ওপর হামলা চালিয়ে বাবার হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
তিনি বলেন, বাবাকে নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত। আমরা মামলা করেছি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
জানা গেছে, অভিযুক্ত লিটন বাগুলাট ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আলী হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ থেকে শহরে ফেরার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন তোফাজ্জেল বিশ্বাসের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে তার ওপর এ হামলা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশরাফুল আলম বলেন, হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মঙ্গলবার দুপুরে। একইদিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে রোগীর স্বজনরা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলেজশিক্ষকের হাতের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আহত কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল বিশ্বাস কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামের আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি কুমারখালী বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মধুয়া এলাকার জালা বিশ্বাসের ছেলে।
রাজু আহমেদ/আরএআর