জিয়ার আদর্শ ধারণ করে বিএনপি করেন কিনা, প্রশ্ন হাফিজ উদ্দিনের

‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে বিএনপি করেন কিনা,’ কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর বিক্রম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মৃত্যুর পর তার (জিয়াউর রহমান) কোনো বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স ছিল না। আর এখন কালো কোর্ট গায়ে দিলেই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাওয়া যায়। যুদ্ধের সময়ে ছিলাম ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের বদৌলতে এখন হয়ে গেছে আড়াই লাখ মুক্তিযোদ্ধা। এইসব শরণার্থী মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে কোথায় ছিলেন তা জানি না।’
‘শেখ হাসিনার শাসন সেনাবাহিনীর শাসনের চেয়েও খারাপ’ উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘মগের মুল্লুক মিয়ানমারে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার আমাদের মাঠেই নামতে দিচ্ছে না। এই সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে।’
বীর বিক্রম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই সরকারকে সরিয়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আপনারা মঞ্চের সামনে এসে শ্লোগানে আগুন জ্বালান। এই রাজনীতি বাদ দিন। মঞ্চে আগুন জ্বালানোর দরকার নেই। শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাতে হবে। এ জন্য রাজপথে সক্রিয় থাকতে হবে।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, ‘দেশে এখন যে গণতন্ত্র চলছে তা পৃথিবীর কোনো সংবিধানে নেই। দেশে চলমান গণতন্ত্রের কোনো সংজ্ঞা আজও আবিষ্কার হয়নি। এটি হচ্ছে প্রশাসনিক গণতন্ত্র, পুলিশি গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র ভেঙে ফেলে আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের ভোটে আসার সুযোগ নেই বলেই বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানাই এবং নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘দিন দিন জালিম সরকারের অধীনে ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বলে তারা দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে না, কিন্তু তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিটি নির্বাচনগুলোকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, মাফিয়া সরকারের অধীনে নয়।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘বিচারবিভাগ আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আলাদা কি না, সেটা জানতে চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন চাই।’
বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘৬ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীর নিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেছি আমরা। মাফিয়া সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’
এদিকে সমাবেশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মো. রাসেল বলেন, যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বাড়তি নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
এর আগে বরিশাল ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সমাবেশস্থলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সামনে মারামারির ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন নেতারা।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর