ইতিহাসের সাক্ষী হতে এসেছি
অপেক্ষার পালা শেষ। রাত পোহালেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বাস বইছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মাপাড়ের সেতু এলাকায়। শুক্রবার (২৪ জুন) দূরদূরান্ত থেকে সেতু দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। তারা পদ্মা সেতু এবং এখানে স্থাপন করা বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
সরেজমিনে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা যায়, মহাসড়কের সড়ক বিভাজক ও মহাসড়কের দুপাশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যানার ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সরকারি সংস্থাও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড লাগিয়েছে। মাওয়া পুরাতন ঘাটে যাওয়ার সড়কেও একই অবস্থা। বিলবোর্ড ও ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরা। শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশ পথ শিমুলিয়া-ভাঙা মোড়ে বড় বড় বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।
মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুলবাগান। শিমুলিয়া ঘাট সাজানো হয়েছে ব্যানার, বিলবোর্ড ও রঙ-বেরঙের আলোকসজ্জায়। ঘাটের পার্কিং ইয়ার্ডে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডকুমেন্টরি প্রদর্শনীর বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে।
সেতু উদ্বোধন স্থল ও সেতু ঘুরে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে কথা হয় আহাদুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি নীলফামারী জেলায়।
সাজেদুল ইসলাম ঢাকায় একটি এনজিওতে চাকরি করেন। এর আগে পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি তার। শুক্রবার ছুটির দিন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সেতু দেখতে এসেছেন।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের দিন শনিবার অফিস খোলা। তাই বন্ধের দিনে বন্ধুদের নিয়ে সেতু দেখতে এসেছি।
শিমুলিয়া ঘাটে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা মাদারীপুরের স্বপ্না আক্তার বলেন, সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি। আজ ফেরিতে করে বাড়ি যাচ্ছি। উদ্বোধনের পর গাড়িতে সেতু দিয়ে ঢাকায় ফিরবো।
আহাদুল বলেন, দীর্ঘদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পদ্মা সেতু দেখেছি। বাস্তবে দেখা হয়নি। এই সেতু পার হয়ে আমাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে না। তারপরেও দেশের এত বড় একটি অর্জন নিজ চোখে দেখতে এসেছি। উদ্বোধনের দিন সেতুতে উঠে ইতিহাসের সাক্ষী হতে নীলফামারী থেকে এসেছি।
মাহমুদুল হাসান নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, আমার বাড়ি ময়মনসিংহে। পদ্মা সেতু দেখতে এসেছি। সময় যেন কাটছে না। পদ্মা সেতুতে উঠব, সেতু দিয়ে পদ্মার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যাব।
পদ্মা পারপারের অপেক্ষায় থাকা দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর কমপক্ষে ১৫-২০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, কয়েক বছর আগেও পদ্মা সেতু নির্মাণ অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে ছিল। সব শঙ্কা কাটিয়ে পদ্মা সেতু হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য কী, আমরাই সবচাইতে ভালো জানি। পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লাশে পরিণত হয়েছি। অনেকের সুখের সময়গুলো এই ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির অপেক্ষায় থেকে নষ্ট হয়েছে। কত আনন্দ কত কিছু বিসর্জন দিয়েছি এ ঘাটে। শনিবারের পর থেকে আর এ দুর্ভোগ থাকবে না।
মাদারীপুরের আমিরাবাদ এলাকার আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। সেখানেই থাকতেন। সপ্তাহিক ছুটিতে একদিনের জন্য বাড়ি আসতেন। তিনি মুচকি হেসে বলেন, ঢাকার বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। ২৬ তারিখ থেকে বাড়িতে আসা যাওয়া করেই অফিস করবো। বাড়ির মানুষের সঙ্গে থাকব।
লৌহজং মাওয়া এলাকার বাসিন্দা রাসেল হোসেন নিরব বলেন, শত প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে। আমাদের এলাকার মানুষ তাদের বাপদাদার বসতভিটা ছেড়ে দিয়ে কষ্ট পেয়ে ছিলেন। পদ্মা সেতু হওয়ায় সবাই গর্বিত। খুসিতে আত্মহারা। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মতো আমাদের মুন্সীগঞ্জেও আনন্দের জোয়ার বইছে।
লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদার বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র লৌহজং উপজেলার মানুষের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে । সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে শিমুলিয়া ঘাটে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আতশবাজি উৎসব হবে।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের প্রেরণা। স্বাধীনতার পরে এটা অনেক বড় অর্জন। আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি। শেখ হাসিনা দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আরেকবার বাঙালি জাতির পরিচয় তুলে ধরেছেন। এর ফলে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে রাস্তার দুই পাশে ইকোপার্ক হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। তবে উদ্বোধনের পর সাধারণ দর্শনার্থীদের সেতু ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এ বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
ব.ম শামীম/আরএআর