বীজ ব্যবসায়ী মাসুদের বিচার চাই

লক্ষ্মীপুরে চড়া দামে ঢ্যাঁড়সের বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন শতাধিক কৃষক। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন করেছেন। এ সময় তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভেজাল বীজ ব্যবসায়ী মাসুদের বিচার দাবি করেন।
সময় ও অর্থ নষ্ট করে প্রতারণার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, শহরের মাছবাজার গলির মাসুদ বীজ ভান্ডার চকচকে মোড়কে আদনান সিড নামে ও স্থানীয় ঠিকানা দিয়ে এ বীজ সরবরাহ করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সদর উপজেলার টুমচরের কালিরচর এলাকার কৃষকরা বীজ নিয়ে বপন করে প্রতারিত হয়েছেন।
কৃষক ইমদাদুল হক মামুন, আনোয়ার হোসেন, সফিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান জানান, তারা মাসুদ বীজ ভান্ডার থেকে প্রতি কেজি ৬ হাজার ৫০০ টাকা দরে ঢ্যাঁড়স বীজ কিনেছেন। উন্নত জাত দাবি করে বীজগুলো তাদের ঘচিয়ে দিয়েছেন বিক্রেতা। চকচকে মোড়কের ওপরে লেখা ছিল, ভাইরাসমুক্ত সুখী ভেন্ডি ও শান্তি ভেন্ডি। এতে মাসুদের ছেলের নামে (আদনান সিড) ও স্থানীয় ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মাসুদ ঢাকা থেকে নিম্নমানের ভেজাল খোলা বীজ এনে স্থানীয়ভাবে মোড়ক করে তা হাইব্রিড ও ভাইরাসমুক্ত বীজ বলে চড়া দামে বিক্রি করছেন। অথচ খোলা এই বীজের দাম অনেক কম।
ভেজাল বীজ বপন করার কারণে এখন গাছ হলদে হয়ে সব ঢ্যাঁড়স পরিপক্ব হয়ে পড়ছে। এসব শক্ত সবজি বিক্রি বা খাওয়ার উপযোগী নয়। শুধু ঢ্যাঁড়স নয়, আশপাশের বরবটি-করলা ও শসাক্ষেতেও এ ভাইরাসের প্রভাব পড়ছে। কীটনাশক ছিটিয়েও সুফল মিলছে না। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. মাহবুব ও আবুল বাশার জানান, ধারদেনা করে আমরা ক্ষেতে ফসল বুনেছি। এখন আমাদের মাথায় হাত। হাইব্রিড ও ভাইরাসমুক্ত বীজের নামে কম দামের বীজ আমাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করেছে মাসুদ। এতে আমাদের সময় ও অর্থ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে বীজ ব্যবসায়ী মাসুদের বিচার চাই আমরা।
তবে মাসুদ বীজ ভান্ডারের মালিক মো. মাসুদের দাবি, কোনো ভেজাল বীজ বিক্রি করা হয়নি। আবহাওয়াজনিত কারণে ফসলের ক্ষেতে এমনটি হয়েছে। কৃষকরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।
টুমচর ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা কামরুন নাহার জানান, বীজে ভেজালের বিষয়টি আমি অবগত নই। কৃষক মানববন্ধন করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি মাঠে গিয়ে দেখা হবে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, ঢ্যাঁড়সের মাধ্যমে ক্ষেতে ভাইরাসটি ছড়ায়। তা ছাড়া এটি ছোট পোকার মাধ্যমে ক্ষেতে দ্রুত বিস্তার ঘটে। এতে ফসল নষ্ট হয়। বাজারে কিছু অসাধু বীজ ব্যবসায়ীর কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বীজ প্যাকেটজাত করে বিক্রি করার মাসুদের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষকদের অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ