ঈদের আগের সেই চিরচেনা দৃশ্য নেই পাটুরিয়া ঘাটে

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় চিরচেনা ভোগান্তির পাটুরিয়া ফেরিঘাটের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ঘাট এলাকায় আসামাত্র ফেরিতে পার হতে পারছে যাত্রী ও যানবাহন।
বৃহস্পতিবার (০৭ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দুদিন বাকি থাকলেও আজ সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীর চাপ নেই। যেখানে গত ঈদেও ঘাট এলাকায় ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে এবারের ঈদযাত্রার চিত্র পুরোপুরি আলাদা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অনেক যানবাহন ও যাত্রী সেতু দিয়ে বাড়ি ফিরছে। ফলে চিরচেনা ব্যস্ততম পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
ঘাট এলাকায় দূরপাল্লার বাস ও ছোট গাড়ির কোনো সিরিয়াল নেই। ঘাটে যানবাহন আসামাত্র সরাসরি ফেরিতে ওঠে যাচ্ছে। ট্রাক টার্মিনালে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক থাকলেও তেমন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আগের দিনের চেয়ে ঘাট এলাকায় ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তবে নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করায় ভোগান্তি ছাড়াই পার হতে পারছে।
যশোরগামী যাত্রী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আশুলিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ছুটি পেয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। আশুলিয়া থেকে লোকাল বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছি। ঘাটে আসার পর ফেরিতে স্বস্তিতে উঠতে পেরেছি।
ভাড়ায়চালিত প্রাইভেট কার চালক হাবু মিয়া বলেন, সব-সময়ই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলায় ট্রিপ দেই। ঈদের সময় এই ট্রিপের সংখ্যা বেশি থাকে। প্রতি বছর পাটুরিয়া ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ফেরিতে উঠার টিকিট পেতাম। গতবারও ঈদের দুদিন আগে নৌপথ পার হতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘাট এলাকায় অপেক্ষা করছি। তবে এবার ঘাটের চিত্র পাল্টে গেছে। ঘাটে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেরিতে উঠতে পারছি। ভোগান্তির নৌপথে স্বস্তিতে পার হতে পেরে ভালো লাগছে।
পণ্যবাহী ট্রাকচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ঈদের আগে ও পরে ফেরিঘাটে ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকে। দীর্ঘ দিন আমাগো ঘাটে থাকতে হয়। ভোগান্তি ছিল আমাগো নিত্যসঙ্গী। কত ঈদ যে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে করছি তার হিসার নেই। তবে এবার গাড়ির চাপ না থাকায় সহজেই নৌপথ পার হতে পারছি।
কুষ্টিয়াগামী যাত্রী হোসেন আলী বলেন, ঢাকায় কাজ করি। পরিবার নিয়ে বছরের দুটা ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাই। পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সময় বাসের মধ্যে বউ-পোলাপান নিয়া কষ্ট করে থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। ভোগান্তি ছিল ঈদযাত্রার সঙ্গী। তবে এবার ঘাটে এসে সেই চিরচেনা পাটুরিয়া ফেরিঘাটের চিত্র দেখতে পেলাম না। এবারই প্রথম কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া পরিবার নিয়ে ঘাট পার হতে পারছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ২১টি ফেরির মধ্যে ১৮টি ফেরি দিয়ে ঈদে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ঘাট এলাকায় যাত্রী ও চালকদের কোনো ভোগান্তি নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এ নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন অনেকাংশে কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গত রোজার ঈদেও পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনে ভরপুর ছিল। পুরো ঘাট এলাকা গাড়ির হর্ন, মানুষের কোলাহলে পূর্ণ ছিল। সেই চিত্র এখন আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। পাটুরিয়া ফেরিঘাটে সেই চিরচেনা রূপ আর নেই। ভোগান্তির নৌপথটি যাত্রী ও যানবাহন চালকদের কাছে স্বস্তির নৌপথ হয়েছে।
সোহেল হোসেন/এসপি