বিক্রিই হয়ে গেল পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারটি

অবশেষে বিক্রিই হয়ে গেল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টার নামে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম। যে মাঠে কয়েক দিন আগেও তৈরি হয়েছে খেলোয়াড়, এখন সেখানে চলছে মালিকানা বদলের পালা। তিন কোটি টাকায় ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা স্পোর্টস সেন্টারটি বিক্রি হওয়ায় হতাশ খুদে খেলোয়াড়সহ স্বপ্ন দেখা জমিদাতারা।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে স্থানীয় কিছু লোকের কাছ থেকে নাম মাত্র দামে ১২ একর জমি কিনে স্টেডিয়ামটি গড়ে তোলেন শহরের রোড এলাকার ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ড.সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ সৈয়দ। এরপর জেলার ক্ষুদে ছেলে-মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিতে পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টারে ভর্তি হয়।
ইতোমধ্যে এ মাঠে অনুশীলন করে গিনেস বুকে দড়ি লাফে চার বার বিশ্বরেকর্ড করেছেন রাসেল নামে এক যুবক। আবাহনীতে আন্ডার নাইনটিনে শাকিল নামে একজন গোল কিপার ও আশা নামে আরও একজন বিকেএসপিতে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক প্রশিক্ষণার্থী জেলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৪, ১৫ ও ১৬ তে অংশগ্রহণ করে বিভাগীয় পর্যায়ে গৌরব অর্জন করেছে।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর এলাকায় ড. সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ সৈয়দ জেলার ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি আর্ন্তজাতিকমানের স্টেডিয়াম ও হাসপাতাল করবেন বলে ২০ জনের কাছ থেকে ১২ একর জমি নাম মাত্র দামে ক্রয় করেন। পরে স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয় পল্লীবীর স্পোর্টস সেন্টার। বিদেশিরাও আসতে শুরু করে সেই স্টেডিয়ামে।
তার কয়েক বছর পর জানা গেল, সেখানে আর্ন্তজাতিক নয় হবে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। কার্যক্রম শুরু হয় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের। তিন একর জমি দিতে রাজি হয় ড.সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ সৈয়দ। সরকারিভাবে মাপযোগ হলেও ফাইলটি আর বেশি দূর এগুতে পারেনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের আপত্তি থাকায় ডিসি অফিসেই রয়ে যায় ফাইলটি।
অপরদিকে ফুটবল খেলার আগের ইতিহাসকে ফিরে পেতে কাজ করে যাচ্ছিল ঠাকুরগাঁও জেলার পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টার নামে একটি সংস্থা। কয়েক দিন আগেও গ্রামের ক্ষুদে ফুটবল খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছিল সংস্থাটির কোচ আফজাল ও বিপ্লব। এই সময়ে হঠাৎ পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারটি বিক্রি হওয়ায় হতাশ খুদে খেলোয়াড়সহ স্বপ্ন দেখা জমিদাতারাও। পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারটি হঠাৎ বিক্রি হওয়ায় অনুশীলন চালাতে পারছেন না দুই শতাধিক খুদে খেলোয়াড়।

পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারে জমিদাতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খেলাফত হোসেন বলেন, ড. সাইফুল্লাহ এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমাকে বলেছিল এলাকায় আর্ন্তজাতিকমানের স্টেডিয়াম হবে, অনেক মানুষের কর্মের ব্যবস্থা হবে। সে কারণে স্বল্প মূল্যে তার কাছে জমি বিক্রি করেছি। এখন সে বেশি দামে পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারের ৯ একর জমি বিক্রি করেছে। বাকি ৪ একরে হাসপাতাল নামে কসাইখানা ও নাম সর্বস্ব নাসিং ইন্সটিটিউট চালু রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, স্টেডিয়ামের নামে তিনি বিদেশিদের কাছ থেকে কোটি কোটি অনুদান এনেছে। করোনাকালে অনুদান কম আসার কারণে সে গোপনে স্পোটর্স সেন্টারটি বিক্রি করেছে। আমরা চাই স্টেডিয়াম হোক না হোক, আমাদের জমি আমাদের ফেরত দেওয়া হোক।
প্রতিষ্ঠানটির কোচ আফজাল হোসেন বলেন, পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারকে দাঁড় করাতে আমাদের অনেক পরিশ্রম হয়েছে। নিজের টাকাও খরচ হয়েছে অনেক। শুধু জেলা নয়, বিভাগেও চিনে ঠাকুরগাঁওয়ে পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারের ভালো একটি ফুটবল টিম রয়েছে। হঠাৎ রাতারাতি কেন বিক্রি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।
আরেক জমিদাতা সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস আলী বলেন, পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারে জমি বিক্রি করার পরেও জমির শোক ছিল। কিন্তু যখন দেখতাম ছেলেমেয়েরা সেই জমিতে খেলা করছে, সে দৃশ্য দেখে কষ্ট কমে যেত। এখন সেটি বিক্রি হওয়ায় কষ্ট আরও বেড়ে গেল। সরকার যদি এলাকার ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে স্টেডিয়ামটিকে ফেরাতে পারে, তাহলে এলাকার খুদে খেলোয়াড়রা ঝরে পড়বে না।
রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার কয়েকটি ইউনিয়নের খেলোয়াড়দের ভরসাস্থল ছিল পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টার। বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতাসহ সব খেলা কয়েক বছর থেকে পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারে হয়ে আসছিল। হঠাৎ স্পোটর্স সেন্টারটির মালিকানা পরিবর্তন হওয়ায় শুধু আমাদের ইউনিয়ন নয়, আশপাশের ইউনিয়নের মানুষরাও হতাশ। সরকারিভাবে যদি পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারটি নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হবো।
পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারের কর্ণধার ড. সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ সৈয়দের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ছোট ভাই সৈয়দ আহম্মদের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বড় ভাই এখন ইতালি থেকে অন্য দেশে অবস্থান করছেন। যোগাযোগের নতুন নম্বর পাইনি। লোকসানের কারণে পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টার বিক্রি করা হয়েছে। হাসপাতাল ও নাসিং ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, বিভিন্ন অসুবিধার কারণে পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারের জমি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের জন্য নেওয়া হয়নি। মানুষের সুবিধাজনক জায়গাতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম হবে। পল্লীবীর স্পোটর্স সেন্টারের প্রায় ৯ একর জমি ক্রয় করেছেন মোক্তার হোসেন বাবু (ভূট্টা বাবু) নামে এক ব্যক্তি।
এম এ সামাদ/এসপি