ঠাকুরগাঁওয়ে স্কুলে আটকে রেখে শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন

ঠাকুরগাঁওয়ের ঝাড়গাঁওয়ে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (১৮ জুলাই) দিবাগত রাতে সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের গুঞ্জুরা হাটের ঝাড়গাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।
নির্যাতনের স্বীকার আবু নাঈম (১৭) ঝাড়গাঁও এলাকার দিনমজুর তৌহিদুল ইসলামের ছেলে। সে ঠাকুরগাঁও আবুল হোসেন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ ব্যাপারে নাঈমের বাবা রুহিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে আখানগর ইউনিয়নের গুঞ্জুরাহাট থেকে দেলোয়ার নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে তার ছেলে মুন্না ১৫ যুবক কলেজছাত্র নাঈমকে তুলে নিয়ে যায়। তারা ঝাড়গাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে নাঈমকে রাতভর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। পরের দিন মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় ভিকটিমের বাবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ওই বিদ্যালয় থেকে তাকে উদ্ধার করে।

তবে অভিযুক্তরা বলছেন, নাঈমের কাছে তারা ৪৫ হাজার টাকা পাবেন। টাকা দিচ্ছে না বলে তাকে তুলে আনা হয়েছে। নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা।
এ বিষয়ে নাঈমের বাবা তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমার অভাবের সংসার। লেখাপড়ার পাশাপাশি নাঈম মাঠে দিনমজুরের কাজ করে। দিন শেষে যা টাকা পায় তা দিয়ে সংসারের খরচ চালায় এবং ও তার লেখাপড়ার ব্যায় নির্বাহ করে। দেলোয়ার কোন স্বার্থে এতগুলো টাকা নাঈমকে দিল? যদি নাইম টাকা নিয়ে থাকে তাহলে দেলোয়ার আমাকে কেন বলল না? কেন তারা আমার সন্তানকে স্কুলের ঘরে আটক করে মারধর করল? কী অপরাধ আমার ছেলের? আমি দেলোয়ার বাহিনীর কঠোর শাস্তি চাই।
এ প্রসঙ্গে আখানগর ইউপি চেয়ারম্যান রোমান বাদশা জানান, নাঈম নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করে রাখা হয়েছে এ খবর আমি রাতেই শুনেছি। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আর খোঁজ নিতে পারিনি।
ঠাকুরগাঁও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল (মঙ্গবার) পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষে বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। আজ থেকে বিদ্যালয় খোলা। তবে বিদ্যালয়ের রুমে কলেজছাত্রকে মারধরের বিষয়টি আমার অজানা। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী নাইমের বাবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহ এবং শিক্ষার্থী নাঈমের ভিডিও সাক্ষাৎকার নিতে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিপ্লব দৈনিক নয়া দিগন্তের রুহিয়া প্রতিনিধি আপেল মাহামুদের মুঠোফোন কেড়ে নেন এবং লাঞ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মো. বিপ্লবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
এম এ সামাদ/আরআই