নওগাঁয় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমি অফিস নির্মাণ

নওগাঁয় বিরোধপূর্ণ জমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে ওই জমিতে ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করছে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রশাসন।
নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে শুক্রবার (২২ জুলাই) সকাল প্রায় ৯টায় নওগাঁ প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার লাইব্রেরি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই জমির দাবিদার আকবর আলী। তার বাড়ি পাশের বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার পৌরসভায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ওই জমি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। এ ছাড়া ওই জমিতে নিম্ন আদালতের স্থিতাবস্থা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি যে অবস্থায় রয়েছে তেমনটিই থাকবে, নির্মাণ করা যাবে না কোনো স্থাপনা। আদালতের এমন নির্দেশনা না মেনে বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে ভূমি অফিস নির্মাণকাজ শুরু করেছে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রশাসন।
তিনি আরও জানান, ১৯৮৭ সালে আমি নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের খাট্টা শাহাপুর মৌজায় সোয়া ১৭ শতক জায়গা ক্রয় করি। যার দাগ নম্বর সাবেক ৯৮৭/৯৮৮, হাল ৭৯৬/৭৯৭। ওই জমিটি ‘নয়নজলি’ বা ‘চৌবাচ্চা’ হিসেবে খতিয়ানভুক্ত ছিল। আমি জমিটি ক্রয় করে বালু দিয়ে ভরাট করে করাত কল করে ৩৫ বছর যাবৎ ব্যবসা করে আসছিলাম। কিন্তু আমার সোয়া ১৭ শতক জমিসহ খাট্টা শাহাপুর মৌজার ৩৫ শতক জমি সরকারি গেজেটে ভুলক্রমে পরিত্যক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। সে বিষয়টি আমি জানার পর দলিল সংশোধন ও ওই জমির ওপর স্থিতাবস্থা চেয়ে ২০০৩ সালে নওগাঁ জেলা জজ আদালতে মামলা করি। আদালত সেই মামলার শুনানি নিয়ে ২০০৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমির ওপর স্থিতাবস্থা আদেশ জারি করেন এবং মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।

সম্প্রতি নওগাঁ সদর উপজেলা প্রশাসন ওই জমিতে ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করলে তিনি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন জানিয়ে বলেন, আদালত ওই রিটের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৯ মার্চ বিবদমান জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কেন, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসক, নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিবাদীরা চার সপ্তাহ পার হলেও সেই রুলের জবাব না দিয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওই জমিতে গত ১৮ জুলাই থেকে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
এ বিষয়ে আকবর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই নির্মাণকাজের ফলে আমি প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়ব। কীভাবে আদালতে বিচারাধীন সম্পত্তিতে একটি সরকারি অফিস নির্মাণ করা হয়? আমি মনে করি এ কাজ সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও আদালতের রায়ের অবমাননা। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবদমান জমিতে নির্মাণকাজ বন্ধ ও এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে সুবিচার আসা করি আমি।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই জমিটিকে অনেক আগেই খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ওই জমির মালিকানা যিনি দাবি করছেন, তাকে অনেকবার কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি আসেননি।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যে রুল জারি করেছেন, সেটারও জবাব আমরা দিয়েছি এবং জমিটি নিষ্কণ্টক, যা যথাযথ আইন মেনেই আমরা ভূমি অফিসের কাজ শুরু করেছি।
এনএ