নৌকাকে জেতাতে প্রকাশ্যে ভোটের অঙ্গীকার!

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন। এতে মেয়র পদে নৌকায় প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অঙ্গীকারের বিষয় জানা নেই উপজেল নির্বাচন কর্মকর্তার। এ ঘটনায় নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি।
এদিকে কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত পাপুল অধ্যায়ের ইতি হলেও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত। এখানে দলীয় মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটকে বিজয়ী করতে নেতারা কাজ করছেন। মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের ৪ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, মেয়র পদে নৌকায় ভোট প্রকাশ্যে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ৯টি ওয়ার্ডের ৫৭ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নসহ জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার শীর্ষ নেতারা উপস্থিতি ছিলেন।
সভায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের ইভিএমে নৌকা মার্কায় প্রকাশ্যে ভোট দিবেন এবং এতে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে কাউন্সিলর ভোটের পরিবেশ চেয়েছেন। নৌকার বিষয়ে সেখানে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরাও আন্তরিক বলে ঘোষণা দিয়েছে। ওই সভায় অংশ নেওয়া অন্তত ১৫ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি সমর্থিত পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কাশেম বলেছেন, কেন্দ্রে নৌকার ভোট নেওয়ার বিষয়ে আমার আপত্তি নেই। আমি কাউন্সিলর ভোট নিরপেক্ষ চাই। এটা সভায় অন্যসব প্রার্থীদের সঙ্গে আমিও একমত হয়েছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপি-জামায়াত ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা করেছিল। সব ধরনের সহিংসতা এড়াতে আমরা কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে বসেছি। আমাদের মেয়র প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবে। ইতোমধ্যে উপনির্বাচন নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা এখন মেয়র ভোট নিয়ে ব্যস্ত।
বিএনপির পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের সমর্থন দেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের ডেকে নিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়া এবং সহযোগিতা করতে অঙ্গীকার করিয়েছে। তারা আমাদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে দিচ্ছে না। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ চাই।
প্রসঙ্গত, ১৪ ফেব্রুয়ারি রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটাররা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম মেজবাহ উদ্দিন মেজুর কর্মী সমর্থকরা কালো পর্দার বাইরে ইভিএম রেখে বোতাম টিপে নৌকায় ভোট নিয়েছে। নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করার ঘটনায় গণমাধ্যমে ভিডিও, ছবি ও সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় হয়।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের গিয়াস উদ্দিব রুবেল ভাট ও বিএনপির এবিএম জিলানীসহ ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৫১ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিপক বিশ্বাস বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সভা করার বিষয়টি জানি না। প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি