লাল রঙে সেজেছে শিমুল বাগান

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। শীতের রিক্ততা ভুলে তাহিরপুরের শিমুল বাগানে আজ ফাগুনের ছোঁয়া, আগুনরাঙা বসন্তের সুর। গাছে গাছে রক্তরাঙা শিমুল ফুল। তবে পর্যটকরা বলছেন, সুনামগঞ্জ থেকে যাতায়াতের সড়ক ভালো হলে বিড়ম্বনা ছাড়াই শিমুল বাগান যাওয়া যাবে।
২২ একর জায়গাজুড়ে জাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত শিমুল বাগান। সারি সারি করে সাজানো এই গাছ। দেখে মনে হয় অভিজ্ঞ কোনো কারিগরের নকশায় সেজেছে বাগানটি। প্রায় ৩ হাজার শিমুল গাছ রয়েছে বাগানটিতে।
বসন্তের দুপুরে পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা মন রাঙায় তো বটেই, ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়ের। এ যেন কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এ পাড়ে শিমুল বাগান। সব মিলে মিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য।
স্বামীর সঙ্গে সিলেট থেকে শিমুল বাগানে ঘুরতে এসেছেন চামেলী রহমান। বসন্তের মিষ্টি রৌদে লাল টুকটুকে শিমুল ফুলের মালা মাথায় দিয়ে স্বামীর হাত ধরে হাঁটছেন। হেঁটে বাগানের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছেন।
চামেলী রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামীর সঙ্গে শিমুল বাগানে ঘুরতে এসেছি। রাস্তায় আসতে ভোগান্তির শিকার হলেও শিমুল বাগানে পৌঁচ্ছে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। এসে এক কথায় আমরা মুগ্ধ।
সিলেট সরকারি কলেজের বিএস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাত্রি। তিনিও শিমুল বাগানে ঘুরতে এসেছেন। রাত্রি বলেন, এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। সুন্দর একটি পরিবেশ। তবে এবার মনে হয় আগেই চলে এসেছি। গতবার যখন এসেছিলাম তখন পুরো বাগানে লালে লাল ছিল। এখন মাত্র ফুল ফোটা শুরু হয়েছে।
দর্শনার্থী আকরাম উদ্দিন বলেন, তাহিরপুর উপজেলার শিমুল বাগানে এই সময় অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। আমিও তাদের মতো প্রকৃতিপ্রেমী। বসন্তে শিমুল বাগানের লাল ফুলের খেলা দেখতে এসেছি। সারাদিন থেকেছি। সব পর্যটকদের সঙ্গে মিলে আরও ভালো লেগেছে।
সুনামগঞ্জের দর্শনার্থী অ্যাড. মাহবুবুর হাছান শাহীন বলেন, শিমুল বাগানের পরিবেশ বেশ চমৎকার। কিন্তু সমস্যা হল এখানে আসতে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। এখানে আসা যাওয়ার রাস্তাটা খুবই খারাপ। পর্যটনবান্ধব তাহিরপুর উপজেলায় রাস্তাঘাট ভালো হলে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
বালিজুরি হাজী এলাহী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান মিশু বলেন, শিমুল বাগান আমার ভালো লাগার জায়গার মধ্যে একটি। অনেকদিন লকডাউনের পর এখানে এসেছি। যারা ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের শিমুল বাগানে আসা উচিৎ।
হবিগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক মো. আতাউর রহমান শরিফ বলেন, আরও শিমুল গাছ দেখেছি। ফুল দেখেছি। কিন্তু এতো ভালো লাগেনি। ভালো লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাগানের উত্তরে ভারতের বিশাল মেঘালয় দাঁড়িয়ে আছে। নিচে যাদুকাটা নদী। এই যাদুকাটা নদীর কিনারা ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে শিমুল বাগান। প্রকৃতির এই মেলবন্ধনে শিমুল বাগান সেজেছে।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জোবায়ের মল্লিক বলেন, বাগানের সবকিছুই সুন্দর। বসন্তের এই সময়টাতে শিমুল বাগান মিলনমেলায় পরিণত হয়।
শিমুল বাগানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ জয়নাল আবেদীনের দ্বিতীয় ছেলে মো. নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর শিমুল বাগান। আমার বাবা এটি তৈরি করেছিলেন। প্রতিদিন শিমুল বাগানে হাজার হাজার পর্যটক আসে। পর্যটক আসাতে আমরাও অনেক আনন্দিত হই। প্রত্যেকে শিমুল বাগানে এসে মুগ্ধ হয়। আমার বাবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তাদের এই আগ্রহে আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই।
তিনি আরও বলেন, যদি সড়কের অবস্থা ভালো হয় তাহলে পর্যটক আরও আসবে। এখন ফুলের সংখ্যা কম হলেও বসস্তের মাঝামাঝি সময়ে ফুলে ফুলে লাল হয়ে যাবে শিমুল বাগান।
এসপি