একসময় বঙ্গবন্ধুর নাম নিলে শাস্তি দেওয়া হতো : জাফর ইকবাল

‘বই পড়া একটি সাংঘাতিক ব্যাপার। যারা বই পড়ে আর যারা বই পড়ে না, তাদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বই পড়ার অভ্যাস মানুষের কল্পনাশক্তি বাড়ায়। এ জন্য তোমাদের বই পড়তে হবে। বিভিন্ন রকমের বই আছে, তা পগতে হবে এবং প্রতিদিন পড়তে হবে।’
বুধবার (১০ আগস্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম দেওভোগের ভূইয়ারবগ এলাকা বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে 'কৈশোরে তারুণ্যে বই' প্রতিপাদ্যে আয়োজিত বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন খ্যাতিমান লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি ছোটদের জন্য বই লিখি, তাই তারা আমাকে অনেক পছন্দ করে। তারা আমাকে লম্বা চিঠি লেখে। একটি চিঠি এল, সেখানে লেখা, ‘আমি বই পড়তে পছন্দ করি, কিন্তু আমার বাব-মা আমাকে বই পড়তে দেয় না।’ আমি চিঠির উত্তরে লিখেছি, ‘তোমার বাবা-মা যদি তোমাকে খেতে না করে, তবে তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে খাও, চুরি করে খাও। ঠিক সেভাবে তোমার বাবা-মা যদি তোমাকে বই পড়তে না দেয়, তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়ো, বাথরুমে গিয়ে বই পড়ো, প্রয়োজনে কাঁথার নিচে টর্চলাইট জ্বালিয়ে বই পড়ো।
তোমাকে বই পড়তে হবে, কারণ বই না পড়লে তুমি মানুষ হবে না। তুমি যদি বই পড়ো, তবে তুমি কল্পনা করতে পারবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, জ্ঞানের বেশি গুরুত্ব নাই, কল্পনা শক্তির গুরুত্ব আছে। বড় হতে হলে বই পড়তে হবে, আমরা চাই তোমরা বড় হও এবং বড় হয়ে দেশের দায়িত্ব নাও।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, তোমরা বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছ? তোমরা হয়তো ভাবছ এই মানুষটা কি পাগল বঙ্গবন্ধুর নাম জিজ্ঞেস করে? বাংলাদেশে কে বঙ্গবন্ধুর নাম শোনেনি? ১৯৯৪ সালে যখন দেশে আসলাম, তখন দেশে কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম বলতে পরত না। একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নাম নিলে শাস্তি দেওয়া হতো। শুধু তা-ই নয়, রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর নাম বলা হতো না, টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হতো না। ১৯৯৬ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় এল, তখন টেলিভিশন কিনলাম, নিশ্চয়ই এবার বঙ্গবন্ধুকে দেখানো হবে।
২১ বছর পর প্রথমবার বঙ্গবন্ধুকে টেলিভিশনে দেখানো হলো। আমরা একটি খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি। যেই মানুষটি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে একটি দেশ এনে দিলেন, সেই দেশে তার নাম নেওয়া অপরাধ ছিল। আসলে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই জিনিস, পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে, যেখানে একটা মানুষ ও দেশকে একসঙ্গে তুলনা করা হয়।
বইমেলার উদ্বোধন শেষে মেলায় আসা ১০টি প্রকাশনীর স্টল ঘুরে দেখেন দেশসেরা এ লেখক। পরে তিনি বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের পাঠাগার ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বই পড়ার আগ্রহ ও পাঠাগারের প্রশংসা করেন।
বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ূনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী তুষার আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সফিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) নাজমুল হাসান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সদস্য আব্দুস সালাম, কাশেম জামাল, দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, জাকির হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন সোহেল, সালমা পারভিন প্রমুখ।
এনএ