সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন বগুড়ার সফল নারী উদ্যোক্তা মহুয়া

সুই-সুতাই স্বপ্ন বোনা, সফল নারী উদ্যোক্তা, এ যুগের নারী জাগরণের বাঁশিওয়ালা ও জয়ীতা অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী, জীবনযুদ্ধে হার না মানা জান্নাতুল ফেরদৌস মহুয়া সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
অনলাইন পেজ উইমেন অ্যান্ড ইকর্মাস ট্রাস্ট (উই) এর অ্যাসিসটেন্ট কো-অর্ডিনেটর ছিলেন বগুড়ার এই মহুয়া। রোববার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহুয়ার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উই পেজের তার সহযোদ্ধারা দোয়া ও শোক জানিয়ে অনেক পোস্ট দিয়েছেন।
বগুড়া শহরের চকলোকমান খন্দকারপাড়ার বাসিন্দা মরহুম আব্দুল মজিদ ও ছাহেরা বেগমের কোলজুড়ে ১৯৯৫ সালের ২ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদদৌস মহুয়া। জন্ম থেকে মহুয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মহুয়া সবার ছোট। তিনি ছোট থাকাকালেই বাবা মারা যান। এরপর দুই ভাই এবং মাকে নিয়ে মহুয়ার জীবন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মানসিকভাবে তিনি স্বপ্ন দেখতেন আকাশ ছোঁয়ার। সেই স্বপ্নকেই একটু একটু করে বাস্তবে রূপ দিচ্ছিলেন কাপড়ে সুই-সুতার কারুকাজ করে। মহুয়া বগুড়ার ফয়জুল্লাহ হাইস্কুল থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, শাহ সুলতান থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮ সালে ইংরেজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স এর ফাইনাল পরীক্ষায় ভাইভা দিয়েছেন।
তিনি গত মে মাসে একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আয় করেছিলেন ১১ লাখ টাকা। তার পণ্য আমেরিকা, লন্ডন, সুইজারল্যান্ড, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। রংধনু নামে ফেসবুকে তার পেজ আছে। সবশেষ পোস্ট করেছেন ৭ জুলাই সুতি বাহারী রংয়ের ওড়নার।
মহুয়ার বড় ভাই গোলাম মোস্তফা জানান, আগে থেকে মহুয়ার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ছিল। রোববার সকালে তার শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা বেড়ে গেলে স্থানীয় ক্লিনিকে নিলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উইমেন অ্যান্ড ই-কর্মাস ট্রাস্টের (উই) সদস্য শিউলী আকতার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, মহুয়া আপনি কি জানেন? আমার দুই মেয়েকে কতবার আপনার উদাহরণ দিয়ে উৎসাহ দিয়েছি। ছোট-বড় সব কাজে আপনার ছবিটা ওদের সামনে তুলে ধরেছি। আমি নিজেও আপনার কথা মনে করে নিজেকে সাহস দিয়েছি। এত সম্ভাবনাময়, অদম্য হার না মানা একজন মানুষ! মৃত্যুর কাছে আসলে সবাইকেই হেরে যেতে হয়। আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। উই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অন্তরে আপনার উপস্থিতি আজীবন থাকবে। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে রাখুন দোয়া থাকবে সব সময়।
বগুড়া সরকারি শাহসুলতান কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মহুয়ার শিক্ষক জেবুন নেসা জেবা জানান, জীবনের সঙ্গে প্রবল সংগ্রাম করা আমাদের লড়াকু মেয়েটাকে আল্লাহ তুলেই নিলেন। জান্নাতুল ফেরদৌস মহুয়া জীবনে তোমার সংগ্রাম ছিল আর্নেষ্ট হেমিংওয়ের কোড হিরোদের মতো। এত প্রতিবন্ধকতা নিয়েও মাস্টার্স ভাইভা দিলো গত বুধবারে। সেইসঙ্গে নিজের বুটিক হাউজও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিল। কিন্তু আজ সকল সংগ্রামের ইতি ঘটল। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই তাকে ভালো রাখবেন।
এমএএস