নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যর্থ সরকার : গণতন্ত্র মঞ্চ

সরকার বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধের ব্যর্থতা আড়ালের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সংগঠনটির নেতাদের দাবি, বর্তমানে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্য ক্রয়ের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এভাবে দেশ চলতে থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিপেশার মানুষেরা নীরব দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রংপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ অভিযোগ তুলে ধরে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন গণতন্ত্র মঞ্চ। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও সংবিধান সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ নামের নতুন এই রাজনৈতিক জোট।
সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, ভোটারবিহীন এই সরকার জনগণকে উন্নয়নের বুলি কপচিয়ে ব্যর্থতা আড়ালের চেষ্টায় মেতেছে। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের নামে সরকার কুইক রেন্টাল দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট চালিয়েছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে জনগণের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শতভাগ বিদ্যুতের গল্প শুনিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে জনগণের প্রায় লক্ষ-কোটি টাকা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে তুলে দিয়েছে। বিশ্ব বাজারের দোহাই দিয়ে এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশ পরিচালনায় এই সরকার এখন পুরোপুরি ব্যর্থ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ক্ষমতাসীনরা লুটপাট-পাচার নিরঙ্কুশ করতে জ্বালানি খাতের আইনগুলোতে দায়মুক্তি দিয়েছে। যাতে করে সরকারকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা না যায়। এখন দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে পুলিশসহ সরকার দলীয় পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধি রাজনৈতিক শক্তির প্রতি সরকারের দমন, নিপীড়ন ও নির্যাতনে সাধারণ জনগণ ভয়ে আছেন। রাতের বেলা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও মানুষজন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ সবকিছুর দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির রংপুর জেলা সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ খান সহিব, রংপুর জেলার সদস্য সচিব আশিকুর রহমান, জেএসডির মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সাদেক জিহাদী, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মহানগর সমন্বয়ক অধ্যাপক চিনু বসীর, কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান, জেএসডির মহানগর সভাপতি সাদেকুর রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব নুরুজ্জামান হোসেন নুর প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, স্বাধীন দেশের পুলিশ চলে বৃটিশদের রেখে যাওয়া ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে। তাই দেশ স্বাধীন হলেও পুলিশ আসলে রয়ে গেছে সেই ব্রিটিশ আমলের। এখনো বৃটিশদের রেখে যাওয়া কলোনিয়াল আইনের কারণে পুলিশ এদেশের মানুষের ওপর কলোনিয়াল কায়দায় জুলুম নির্যাতন চালায়।
দেশের আইন ও সংবিধানে পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় যেকোনো বাহিনীকে এমনকি নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যারও দায়মুক্তি দিয়েছে। ৭২ সালে সংবিধান তৈরির সময় এইসব ব্রিটিশ কালা-কানুন পাল্টানো হয়নি। বাংলাদেশকে এই অবস্থা থেকে বের করতে হবে।
এ সময় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে দেশ গড়তে সর্বস্তরের গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আন্দোলনে সামিল হবার আহ্বান জানানো হয়। সামবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই