সবুজ পাহাড় আর মেঘের মিতালি যেখানে

যদি ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত শহুরে মনকে একটু প্রশান্তি দিতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা পার্বত্য জনপদ রূপের রানী রাঙামাটিতে। শহরকে ঘিরে থাকা অসংখ্য পাহাড়ের ভিড়ে এমন একটি পাহাড় রয়েছে যার উচ্চতা ছাড়িয়ে গেছে অন্যসব পাহাড়কে। বলছি রাঙামাটির সর্বোচ্চ পাহাড় ‘ফুরোমন’এর কথা।
ফুরোমন অর্থ ফুরফুরে মন। এই পাহাড়ের চূড়ায় বয়ে চলা বাতাস যেকোনো মানুষের মনকে ফুরফুরে করে তোলে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে এমন।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাহাড়টির উচ্চতা ২ হাজার ৬০০ ফুট। পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন হ্রদের বুকে জেগে থাকা রাঙামাটি শহরকে। রাতের অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে সূর্যের আলোতে যখন প্রকৃতি আড়মোড়া ভাঙে, সূর্যের সেই প্রথম আলোর স্বাদ নিতে পারবেন পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে।
তেমনি রাতের নীরবতাকে স্বাগত জানিয়ে যখন সূর্য মিশে যেতে থাকে পাহাড়ের আড়ালে, গোধূলির মিষ্টি আলো গায়ে মেখে সেই মুহূর্তেরও সাক্ষী হতে পারবেন। বর্ষা ও শীতকালে যখন মেঘ মেতে ওঠে লুকোচুরি খেলায়, তখন পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি মেঘের ভেলায় ভাসছেন, কারণ চারপাশে তখন সাদা মেঘের হাতছানি।
১ হাজার ৫১৮ ফুট উঁচু ফুরোমন পাহাড়ের অবস্থান রাঙামাটি শহরের অদূরেই। রাঙামাটি শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে লোকাল ও রিজার্ভ দুভাবেই যেতে পারবেন। নামবেন সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শালবাগান পুলিশ ফাঁড়িতে। পুলিশ ফাঁড়ির একটু পরেই দেখতে পাবেন সাইনবোর্ডে লেখা আছে বৌদ্ধমূর্তি স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান।
তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকা ফুরোমন পাহাড় আপনাকে স্বাগত জানাবে। সাইনবোর্ডের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা ধরেই পৌঁছাবেন পাহাড়ের পাদদেশে। সেখান থেকেই ওঠা শুরু করবেন পাহাড়ের চূড়ায়। পাহাড়ে ওঠার প্রবেশমুখে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা স্থানীয় ফল এবং পাহাড়ি সবজির পসরা সাজিয়ে বসেন, চাইলে স্বাদ নিতে পারেন চিনাল, গুলগুইল্লা, ডাব, কমলা, মাল্টাসহ নানা ফলের।
এরপর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে যাত্রা শুরু। যাত্রাপথে পেয়ে যাবেন ৪০০ ধাপের খাড়া সিঁড়ি। এই খাড়া সিঁড়ি পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হবে পাহাড়ের চূড়ায়। যাত্রাপথে আপনাকে সঙ্গ দেবে ঝিঁঝি পোকার ডাক, নির্মল বাতাস আর পাখির কলকাকলি।
সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশে মেঘের মিতালি ঘটে ফুরোমন পাহাড়ে। এখানে বাতাস আর নীরবতার খেলা চলে সর্বক্ষণ। চারিদিকে প্রজাপতির স্বাধীন ছুটে চলা, বুনো পোকাদের ব্যস্ততা, পাতাঝরা গাছের উদাত্ত আহ্বান, সামনে সবুজে ঘেরা পুরো রাঙামাটি জেলা, এই অপার সৌন্দর্য আপনাকে উদাস ভাবনায় ডুবিয়ে রাখবে অনেকক্ষণ।
এই পাহাড়টি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও সম্প্রতি পাহাড়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি পাহাড়প্রিয় অনেক পর্যটক এখন ভিড় করেন। সময়ের সঙ্গে ফুরোমন পাহাড় প্রেমীদের কাছে একটি নিরাপদ এবং প্রশান্তির জায়গা হয়ে উঠবে এমনটাই আশা করছেন পাহাড়ে আসা লোকজন।
এসপি