ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে জাজিরার নদী পাড়ের মানুষ

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর

১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৮ এএম


অডিও শুনুন

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা পাড়ের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন। কেউ কেউ বাপ-দাদার ভিটে সরিয়ে অন্য জায়গা চলে যাচ্ছেন। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, জাজিরায় পদ্মা সেতুর জিরো পয়েন্ট থেকে বড়কান্দি পর্যন্ত থেমে থেমে নদী ভাঙছে। গত কয়েক দিনে নদীগর্ভে চলে গেছে দুই থেকে তিন কিলোমিটার জায়গা। এতে কমপক্ষে ৪০টির বেশি ঘর অন্য জায়গা সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে খোলা জায়গায় বসবাস করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাজিরার পালেরচর ও বড়কান্দি এলাকায় পদ্মার ভাঙন চলছে। অনেকে বাড়ি-ঘর ভেঙে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় রাখলেও খাম ও বেড়া লাগিয়ে রাখছে, যদি থামে নদীর ভাঙন। এদিকে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন পালেরচরের ১ নং ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মসজিদ ও স্কুল। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এতেও বন্ধ করা যাচ্ছে না নদীর ভাঙন।

Dhaka post

পালেরচরের বাসিন্দা আসমা বানু বলেন, জমিতে ধান ছিল। পেকেও গিয়েছিল। হঠাৎ করে রাতে নদীর ভাঙনে সেই ক্ষেত ডুবে গেছে। ঘর সরাতেও সময় লাগছে। তাই ক্ষেতের দিকে নজর দিতে পারিনি। এখন আমার ফসলও নদীতে, ধানক্ষেতও নদীতে।

মরিয়ম আক্তার নামে আরেকজন বলেন, আমি বুড়ো মানুষ। আমার ঘরের লোকও বুড়ো। কে করে দেবে আমাদের কাজ? এই ছোট একটি ঘরে আমরা দুজন থাকি। হয়তো আজ রাতে থাকতে পারব না। ঘর ভেঙে নিয়ে যাবে নদী। কীভাবে থাকব, কীভাবে চলব, কে আমাদের খাওয়াবে- বলতে পারছি না। 

আনোয়ার মিয়া নামে একজন বলেন, গতকাল রাতে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ নদীভাঙনের শব্দে ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। এই রাতে ৩ নল নদী ভেঙেছে। আর তিন থেকে চার হাত পর আমার ঘর। ঘরের সবকিছুই খুলে ফেলেছি, শুধু খামগুলো রয়ে গেছে। এখানে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই, এছাড়া কিছুই চাই না।

আলিম উদ্দিন নামে একজন বলেন, আমরা এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই। দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙার কারণে এই বেড়িবাঁধটি আমরা চেয়ে আসছি। বর্ষার সময় শুধু জিও ব্যাগ ফেলানো হয়, এছাড়া কিছুই করা হয় না। এই বছর অসময়ে নদী ভাঙা শুরু হয়েছে। আমার কিছুই নেই, সব নদীতে নিয়ে গেছে। আমি আজ এখানে থাকি, কাল ওখানে থাকি। এভাবেই চলে আমার দিন।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে আমরা জিও ব্যাগ ফেলছি। এছাড়া এ বছর জাজিরার পালেরচর ও বড়কান্দি এলাকায় নদীভাঙন রোধে কাজ চলছে। এরই মধ্যে আমরা একটি প্রকল্প তৈরি করে এটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। এটি পাস হলে ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলে স্থায়ী একটি বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করব।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি

Link copied