নৌকাবাইচ দেখতে তিস্তার পাড়ে মানুষের ঢল

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:৪৩ এএম


অডিও শুনুন

দুপুর থেকে নদীর দুই পাড়ে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যা। লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর দুই তীর। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী রেলসেতুর পাশাপাশি সড়ক সেতুতেও ছিল হাজারো মানুষের ঢল। বিভিন্ন বয়সী মানুষের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে তিস্তার পাড়।

নদীর বুকে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। বৈঠার ছন্দে যেন উত্তাল হয়ে ওঠে শান্ত তিস্তা। থেমে থেমে হাজারো মানুষের হৈ-হুল্লোড় আর হাততালি। ঢাক-ঢোলের তালে তালে গ্রাম-বাংলার গান আর মাঝি-মাল্লার ছন্দে অন্যরকম আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়ে সবার মনে।

Dhaka post

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এমনই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদীর রেল ও সড়ক সেতুর মাঝে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। বেলা ১১টায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যায়। প্রতিযোগিতায় স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মাঝি মাল্লাদের ৯টি দল নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

সর্বনাশা তিস্তা পাড়ের দুঃখ ভুলে খনিকের আনন্দে ফুটে ওঠে নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য নৌকাবাইচের মনোরম দৃশ্য।  প্রতিযোগীরা বৈঠার তালে তালে কণ্ঠে তোলে গান। দুই সেতুর ওপরসহ নদীর দুপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা মাঝি মাল্লাদের উৎসাহিত করতে কখনো হাত উঁচিয়ে নয়তো গলা ফাটা চিৎকারে জানিয়েছেন অভিবাদন।

Dhaka post

নৌকাবাইচ দেখতে দুপুর থেকে নদীর পাড়ে ভিড় করতে থাকা নারী-পুরুষরা প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের পাশাপাশি তিস্তা রেলসেতু পাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। 

স্থানীয় সংগঠক মাহমুদুল হাসান পিন্টু বলেন, কাউনিয়া শহরে বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা নেই। প্রতি বছর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা বিনোদনপ্রেমীদের মনের খোরাক যোগায়। এবারের প্রতিযোগিতা নিয়ে সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল বেশি। হাজারো মানুষের ভিড়ে এমন ঐহিত্যবাহী উৎসব দেখতে পেয়ে সকলে আনন্দিত।

Dhaka post

কাউনিয়ার প্রাণের উৎসব নৌকাবাইচ। প্রতি বছরই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই আয়োজন করে আসছিলেন স্থানীয়রা। তবে এবারই প্রথম স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তৃণমূলের জনপ্রিয় সংগঠক মরহুম হযরত আলীর নামে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী একাত্তরের সৈনিক নৌকাবাইচ দলকে একটি ষাঁড়, দ্বিতীয় স্থানে থাকা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস নৌকাবাইচ দলকে একটি গাভি এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী অগ্নি তুফান দলকে একটি খাসি দেওয়া হয়।

তিস্তা রেলসেতু পাড়ে সন্ধ্যায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় তিনি আয়োজকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকাবাইচ খেলার বেশি বেশি আয়োজন করবেন। এতে মানুষের মন ভালো থাকবে। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতা করা হোক।

Dhaka post

মরহুম হযরত আলী স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোরুল ইসলাম মায়া। পরে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মরহুম হযরত আলী স্মৃতি সংঘের সভাপতি ও বালাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিলদার আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও হারাগাছ পৌরসভার সাবেক মেয়র হাকিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুল হাকিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ও বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী প্রমুখ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি

Link copied