নিজেকে মৃত দেখে অবাক হলেন শিক্ষক
করোনাভাইরাসের টিকার (ভ্যাকসিন) নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখতে পান ২০১৪ সালের ৩ জুনে মারা গেছেন তিনি। লাইনটি পড়ে নিশ্চয়ই আশ্চর্য হচ্ছেন? এটা কোনো গল্প নয়, সত্যিকারের ঘটনা। লালমনিরহাটের আদিতমারীর বালাপুকুর উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত রায়ের সঙ্গে এমনটি ঘটেছে। এমনকি ভূমি অফিসের কাগজপত্রে তার জমিজমা চাচাতো ভাইদের নামে রয়েছে। এসব ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী শিক্ষক বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
ওই শিক্ষকের বাড়ি সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়াটেপা গ্রামে। তার বাবা মৃত হিরেম্ব চন্দ্র রায়।
জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার একটি স্থানীয় দোকানে করোনার টিকার নিবন্ধন করতে যান শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত রায়। এ সময় একাধিকবার চেষ্টা করলে সার্ভার সমস্যার কারণে সেখানে নিবন্ধন না করে চলে যান সদর উপজেলার কাকেয়াটেপা গ্রামের বাড়িতে।
কয়েকদিন পর আবারও স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে বসেন তিনি। সেখানে চেষ্টা করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার অকার্যকর দেখায়। ওই দিন বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তিদের জানালে তারা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে যোগযোগ করতে বলেন। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান তিনি। সেখান থেকে তাকে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ৩ জুন তিনি মারা গেছেন। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র ‘অকার্যকর’ দেখাচ্ছে।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায় , ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় মনমোহন রায় নামের এক ব্যক্তি লক্ষ্মীকান্তকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেন। ওই আবেদনে মনমোহন নিজেকে লক্ষ্মীকান্তের ভাই উল্লেখ করেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করান মনমোহন।
তাছাড়াও মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর যাচাইপত্রে আছে। তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আফতাব উজ্জামানের অনুমোদনে তালিকা থেকে লক্ষ্মীকান্ত’র নাম বাদ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন।
লক্ষ্মীকান্ত রায় মোবাইল ফোনে বলেন, করোনার টিকার নিবন্ধন করতে শুধু নয়, ২০১৬ সালে মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৯ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। তখনও তার আঙুলের ছাপ মেলেনি। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি যে, আমাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, মনমোহন রায় নামে ওই ব্যক্তি সাথে তার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সে কারণে তিনি এমন করতে পারেন বলে ধারণা করছি।
কুলাঘাট ইউনিয়নের ধাইরখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোমিনুর রহমান সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মনমোহনের কথা বিশ্বাস করে নির্বাচন অফিসে কথিত মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছি, এটা আমি ঠিক করেনি। বিষয়টি আমি নির্বাচন অফিসে আবার জানাব।’
সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘লক্ষ্মীকান্ত রায়ের মৃত্যুসংক্রান্ত কোনো কাগজে স্বাক্ষর করিনি। যদি যাচাইপত্রে আমার স্বাক্ষর থাকে, তবে সেটি জাল। এ বিষয় অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বর্তমান নির্বাচন কর্মকর্তা আজাদুল হেলাল বলেন, ‘লক্ষ্মীকান্ত রায়সহ অনেকের নাম জীবিত থেকে ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। লক্ষ্মীকান্ত রায়ের বিষয়টি সুরাহা করতে একটু সময় লাগবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আয়তায় আনা হবে।’
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমএসআর