প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বহিষ্কৃত নেতার সঙ্গে আ.লীগ নেতাদের বৈঠক

জয়পুরহাট জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খাজা সামছুল আলম বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচনে জয়ের সম্ভবনা কম। নির্বাচনের মাঠে তার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকছে। এই শক্তিশালী প্রার্থী আ.লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল আজিজ মোল্লাকে নিয়ে দুই ঘণ্টার বৈঠক করেছেন জেলা আ.লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সেখানে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছেন আ.লীগের নেতারা।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জয়পুরহাট জেলা শহরের রেলগেট এলাকায় অবস্থিত আব্দুল আজিজ মোল্লার মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল সুইট ড্রীম’র নিচ তলার একটি কক্ষে এ বৈঠক হয়েছে।
জেলা আ.লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেতে জয়পুরহাটের দশজন নেতা কেন্দ্রীয় আ.লীগে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে জেলার প্রবীণ আ.লীগ নেতা ও জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা খাজা সামছুল আলমকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর খাজা সামছুল আলম দলীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন অনান্যবারের মতো এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হবেন। কিন্তু একাধিক প্রার্থী থাকায় সেটি আর হচ্ছে না। তবে ভোটের মাঠে দলীয় সমর্থিত খাজা সামছুল আলমের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল আজিজ মোল্লা। এ নিয়ে আ.লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে আব্দুল আজিজ মোল্লার সঙ্গে আজ বৈঠক করেন নেতারা।
বৈঠক শেষে আ.লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, বৈঠকে জেলা পরিষদ নির্বাচন পদে আব্দুল আজজি মোল্লার প্রার্থীতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে আমাদের দলীয় সমর্থন পেয়েছেন খাজা সামছুল আলম। উনার বয়স হয়েছে। নেত্রী দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা তার পক্ষে কাজ করছি। আমরা আব্দুল আজিজ মোল্লার সঙ্গে সমঝোতার বৈঠক করেছি। তাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আজিজ মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ আমাকে নিয়ে আ.লীগের নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা আমাকে জানান যে, নেত্রী যেহেতু খাজা স্যারকে মনোনয়ন দিয়েছে। উনার বয়সও হয়েছে, এটিই তার শেষ ইচ্ছা। তার ও নেত্রীর মান রক্ষার্থে আপনাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আমরা অনুরোধ করছি। আমি তাদের ঘণ্টার ওপর বক্তব্য শুনে বলেছি, আপনারা আমাকে দলেও রাখবেন না, আবার দলের বাইরে থেকে কাজ করবো তখনও অনুরোধ করবেন, এটা আবার কেমন কথা। নেত্রীর নির্দেশ তো আমার ওপর কার্যকর না। কারণ আমি তো দল থেকে বহিষ্কৃত। তাদের অনেক অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমি একটি দিন সময় দিয়েছি, আমার নিজস্ব কিছু লোকজন আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সোমবার আমার সিদ্ধান্ত জানাব।
জানতে চাইলে জেলা আ.লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে জেলা পরিষদ নির্বাচন। বয়স্ক একজন মানুষকে নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছে। তাকে চাপের মধ্যে না ফেলে আমরা সম্মান দিতে চাই। সেই উদ্দেশ্যেই এই বৈঠক করা হয়েছে।
বৈঠকে জেলা আ.লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, সহ-সভাপতি এ্যাড. মোমিন আহম্মেদ চৌধুরী জিপি, এ্যাড. নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল পিপি, গোলাম হাক্কানী, মহসীন আলী, জাহিদুল আলম বেনু, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক সহ দলীয় জেলা আ.লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ১৫-২০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আব্দুল আজিজ মোল্লা জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল) আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরে যান। এখনও তাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। জয়পুরহাট জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
চম্পক কুমার/এমএএস