হারাগাছে নৌকা ডুবিয়ে জয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এরশাদুল হক এরশাদ। তিনি নারকেলগাছ প্রতীক নিয়ে ১৭ হাজার ২৬০ ভোট পেয়েছেন। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত নয়টায় রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফরহাদ হোসেন এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী এরশাদুল হক এরশাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান মেয়র হাকিবুর রহমান মাস্টার নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ১৭৩ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির মোনায়েম হোসেন ফারুক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২১ ভোট। গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে মাত্র এক হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাহিদ হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার ২০৫ ভোট। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডের বিজয়ী কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত তিন নারী কাউন্সিলরের ফল ঘোষণা করা হয়।
হারাগাছ পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডের মোট ২০টি কেন্দ্রে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবার প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ভোটাররা। পরে ভোট গণনা শেষে হারাগাছ পৌরসভা ভবন থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এবার মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯টি ওয়ার্ডে ৪৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ৩টি ওয়ার্ডে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ভোটার ছিল ৪৯ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৩১ হাজার ৫৫৯ জন। ভোট বাতিল হয়েছে ১৬৪ জনের।
মেয়র পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এরশাদুল হক এরশাদ কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সেই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ মাজেদের ছোট ভাই তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে।
এদিকে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বাড়তি সদস্য মাঠে থাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এছাড়া সারাদিন মাঠে ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ টিম। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোনায়েম হোসেন ফারুককে ১ হাজার ৫৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের হাকিবুর রহমান মাস্টার। তিনি পেয়েছিলেন ১২ হাজার ২৪২ ভোট। সেইবার আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও এবার ভোটযুদ্ধে লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পঞ্চম ধাপে ২৯টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এছাড়া শরীয়তপুরের ডামুড্যা ও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার স্থগিত হওয়া নির্বাচনও আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংঘাত, শঙ্কা আর নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে চলা ৩১টি পৌরসভা নির্বাচনে ২৮টিতেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। দুটিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাকি একটিতে বিএনপির প্রার্থী।
স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে রংপুরের হারাগাছে এরশাদুল হক ছাড়া যিনি জয়ী হয়েছেন তিনি হলেন- শরীয়তপুরের ডামুড্যায় রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল। বিএনপির বিজয়ী প্রার্থী হলেন- বগুড়া পৌরসভার রেজাউল করিম বাদশা। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮২ হাজার ২১৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ। তিনি পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৯০ ভোট।
আওয়ামী লীগের জয় পাওয়া ২৮টি পৌরসভার মধ্যে মাদারীপুরের শিবচর, চট্টগ্রামের মীরসরাই ও রাউজান পৌরসভায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ফলে আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এছাড়া রাউজান পৌরসভায় সব কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এইচকে