তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর অপেক্ষায় পঞ্চগড়বাসী

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৩৮ এএম


তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর অপেক্ষায় পঞ্চগড়বাসী

বাংলাদেশে চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়। দুই দশকের বেশি সময় চা-শিল্পে বদলে গেছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা। কিন্তু এখানকার বাগান থেকে উৎপাদিত কাঁচা চা-পাতার ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এবং দাম ওঠানামার কারণে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সরকারের কাছে নজরে আসায় উত্তরাঞ্চলের চা-শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম।

পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চগড়ের ধাক্কামারায় তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চা-বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অকশন মার্কেট এলাকা চিহ্নিত করে পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে এখানে টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ গঠন করা হয়েছে। টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পরিচালনায় ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম খোকনকে আহ্বায়ক ও পঞ্চগড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান শেখকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।

এদিকে জেলার ধাক্কামারায় তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে চা ওয়্যার হাউজ, ব্রোকার হাউজসহ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চা-বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরামর্শে গড়ে উঠছে ওয়্যার হাউজ, ব্রোকার হাউজ, টি টেস্টিং ল্যাব, বায়ার কমফোর্ট জোন। প্রস্তাবিত চা নিলাম কেন্দ্রের অবকাঠামোও প্রস্তুত করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে উদ্যোক্তারা এক বছর ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও এক বছরেও কার্যক্রম শুরু হয়নি।

Dhaka post

এর আগে নিলাম কেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড় টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ গঠন করা হয়। এ অ্যাসোসিয়শেন বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম খোকনকে আহ্বায়ক ও পঞ্চগড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান শেখকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই অ্যাসোসিশেনের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজারে স্থাপিত অকশন মার্কেট তথা নিলাম কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা কিভাবে চায়ের নিলাম হয়, টি টেস্টিং, চায়ের গ্রেডিং, ব্রোকার হাউজসহ চা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারণা নেন।

চা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পঞ্চগড়ে অকশন মার্কেট ঘোষণা হলেই চা-চাষিরা তাদের বাগানের উৎপাদিত চা-পাতা বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাবেন। সেইসঙ্গে অনেক শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব পাবেন। 

জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে নিলাম করা ৭০ শতাংশ চা আসে পঞ্চগড় থেকে। এ সিংহভাগ চা পঞ্চগড় থেকে আসলেও এখানকার চা চাষিরা পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম।

চা চাষিদের অভিযোগ, দেশের নিলাম বাজারে চায়ের দাম ঠিক থাকলেও কারখানার মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। রাতের অন্ধকারে কারখানার মালিকরা হাজার হাজার কেজি চা পাচার করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অবৈধপথে এসব চা বিপণন করে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরকার যেমন হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব, তেমনি ক্ষুদ্র চা চাষিরা দাম না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে চা-গাছ কেটে ফেলে দিচ্ছেন।

তবে কারখানা মালিকরা বলছেন, পঞ্চগড় থেকে দেশের চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল অকশন মার্কেট শত শত কিলোমিটার দূরত্ব থাকায় একদিকে পরিবহন খরচ, অন্যদিকে ওয়্যার হাউজে বেশি চা রাখলে তা মান কমে যাওয়ায় প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য চা চাষিদের ন্যায্যমূল্য দিতে না পারায় তারা কারখানার মালিকদের দুষছেন। এ সমস্যা দূরীকরণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ পঞ্চগড়ে নিলাম কেন্দ্র বাস্তবায়নের অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন চা সংশ্লিষ্টরা। এটি প্রতিষ্ঠা হলে সব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন ক্ষুদ্র চা-চাষিরা।

জে কে টি ওয়্যার হাউজের মালিক জাহেদ আলী বলেন, পঞ্চগড়ের ধাক্কামারায় স্থাপন করা হচ্ছে দেশের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র। আমরা বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরামর্শে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে টি ওয়্যার হাউজ স্থাপন করেছি। কিন্তু কবে নাগাদ তা চালু হবে জানি না। বলা হচ্ছে বাণিজ্যমন্ত্রী এসে ঘোষণা দেবেন। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যক্রম শুরু করতে না পেরে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছি। এখানে সাতটি ওয়্যার ও ব্রোকার হচ্ছে। তার মধ্যে দুটি সম্পন্ন, আর ৫টি আবেদন করা হয়েছে। দ্রুতই যেন নিলাম কেন্দ্র চালুর ঘোষণা দেয়া হয় এমনই প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমি চা-চাষের সম্ভাবনাময় এলাকা। রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনে তা আজ দেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চল হয়ে উঠেছে। উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট এই পাঁচ জেলায় ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত বড় চা-বাগান (২৫ একরের ওপরে) এবং ৭ হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্র চা-বাগান রয়েছে। এ জেলায় ২২টি চা কারখানা গড়ে উঠেছে। আরও ৪০ থেকে ৫০টি চা কারখানা চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। করোনার সময়েও জেলায় রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২১ সালে চায়ের উত্পাদন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ বছরে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে এখানে ১০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল।

বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ধাক্কামারায় দেশের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে চারটি ওয়্যারহাউজ এবং ৭টি ব্রোকার হাউজ প্রতিষ্ঠার আবেদন পাওয়া গেছে। কয়েকটি স্থাপনাও গড়ে উঠেছে। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পরিদর্শনও করেছেন। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিলেই চালু হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রটি।

এসপি

Link copied