রুমায় ৪০ হাজার মানুষের জন্য ১০ শয্যার হাসপাতাল!

নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক সংকট, হাসপাতালের প্যাথলজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ওষুধসহ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস করে। আর এই সংখ্যক জনসাধারণের জন্য রয়েছে ১০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে স্থায়ীভাবে চারজন চিকিৎসক থাকলেও অস্থায়ী সংযুক্তিতে রয়েছেন ৭ জন চিকিৎসক।
সরেজমিনে জানা গেছে, রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দীর্ঘ দিন ধরে ১০ শয্যার ছিল। পরে পার্বত্য মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় নতুন করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটি ৫০ শয্যা পরিসরে নির্মাণ করা হলেও সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা এখন পর্যন্ত চালু হয়নি।
জানা যায়, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পাহাড়ের মানুষরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল হাওয়ায় চিকিৎসকরা স্থায়ীভাবে থাকতেও চান না বলে বরাবরই অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন চিকিৎসকের মধ্যে ড. রায়হানুল খালেদ, ড. ইশতিয়াকুর রহমান ও সার্জারি কনসালটেন্ট ড. মিনা আহমেদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেপুটেশনে সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়া রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও তাহমিনা সুলতানা ডেপুটেশনে জেনারেল হসপিটাল আন্দরকিল্লা চট্টগ্রামে অ্যাটাচমেন্টে কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতালে খালি রয়েছে রেমাক্রি প্রাংসা ও পাইন্দু ইউনিয়নের মেডিকেল অফিসারের দুটি পদ।
স্থানীয় গ্রিনহিল এনজিওর কো-অডিনেটর উশৈহ্লা মারমা বলেন, অনেক বছরের পুরোনো রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত রোগীদের বহির্বিভাগের টিকেট দেওয়ার কোনো সিস্টেমই চালু হয়নি। রোগীদের জন্য প্যাথলজিতে রক্তের হিমোগ্লোবিনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ-সুবিধাও চালু হয়নি। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলেই রোগীদের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বামং প্রু মারমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে হিমোগ্লোবিন ছাড়া ডায়াবেটিসের টেস্টগুলো হয়। অন্যান্য টেস্ট শুরু করতে পারেনি। এর জন্য আমাদের যন্ত্রপাতি দরকার। সেসব যন্ত্রপাতি আমাদের নেই। যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল যদি আমরা পাই, তাহলে আমরা এখানে টেস্টগুলো করতে পারব।
তিনি বলেন, শুধু হাসপাতালের ভবন বাড়িয়ে দিলে হয় না, প্রশাসনিক ভবন দরকার। আমি যেখানে বসতেছি এটাও হাসপাতালে জায়গা। তাছাড়া আমাদের যেসব কর্মচারী রয়েছে, তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের ১৩ জন নার্সের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে মাত্র ছয়জন ডাক্তার থাকার ব্যবস্থা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে নাইটগার্ড নেই, সুইপার নেই। এখান থেকে অনেক ডাক্তার সংযুক্তি বা ডেপুটেশনে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার অনেক ডাক্তারের এখানে পোস্টিং থাকলেও তাদের অ্যাটাচমেন্ট করে নিয়ে গেছে সদর হাসপাতালে। এমনকি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও কাজ করতেছে তারা। তারা এখান থেকে বেতন নেন আর কাজ করেন অন্য হাসপাতালে। এই সমস্যার মধ্যেই আমরা কাজ করছি।
এসপি