১২ বছর পর পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি, তারপরও বিতর্ক

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নানা সমালোচনা চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে নতুন কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি দুধ দিয়ে গোসল করে কলঙ্ক দূর করতে চেয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন রাজনীতি ছাড়ার।
কমিটিতে পদ না পাওয়া এক পক্ষ বিকেলে পৌর সদর বাজার কমিটি বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। খোদ সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি অনুপ্রবেশকারী। এ নিয়ে অনলাইন থেকে অফলাইনেও চলছে পক্ষে বিপক্ষে কাদা ছোড়াছুড়ি।
জানা গেছে, বুধবার (৫ অক্টোবর) দীর্ঘ ১২ বছর পর নতুন কমিটি পায় পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খানের স্বাক্ষরিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে নাজমুল আলমকে সভাপতি ও মো. তোফায়েল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সহসভাপতি মো. আরমিন, মো. আবদুল্লাহ আল-আমিন শেখ মিশু, এয়াদুদ জামান সাগর, জিয়াউল হক জনি, মাহবুব আজাদ তন্ময়, অপূর্ব সাহা, আশিকুর রহমান অভিক, মো.রায়হান মিয়া ও মো.বরকত। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রবিন, মো. আলমগীর হোসেন বাদশা, মো. সাব্বির হোসেন ও মাহমুদুল হাসান রাজিব। সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আলম ছোটন, আল-জোবায়ের নিবিড়, রাকিব হাসান ভূঁইয়া ও মেহেদী হাসান রুমান।
এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তখন মোহাম্মদ এখলাছ উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১২ বছরেও সেই আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। সেখান থেকেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। ১২ বছর ধরে রাজনীতি করেও কমিটি না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন অনেকেই। এছাড়াও উপজেলা ছাত্রলীগে রয়েছে ত্রিমুখী গ্রুপিং। যদিও বর্তমানে এটা দুই গ্রুপে এসে ঠেকেছে।
চরফরাদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির পদবঞ্চিত নেতা মো. সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী ছিল। এছাড়াও বিএনপি নেতা শহিদুজ্জামান কাকনের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে। যে কমিটি করা হয়েছে তা এক পক্ষভাবে ব্যক্তি স্বার্থে করা হয়েছে। এটা সংগঠনের নিয়মবহির্ভূত। এই কমিটি বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন ও তার ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য তৌফিকুল হাসান সাগরের আশীর্বাদপুষ্ট। আমি এক কথায় বলতে পারি উনার টাকায় জেলা ছাত্রলীগ চলে।
আমাদের বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ সাহেব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু সাহেব আছেন, উনারা যা নির্দেশনা দেবেন আমরা সেই মতো কাজ করব। আমরা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আমরা রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এই কমিটি মোকাবিলা করতে মাঠে থাকব।
পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এখলাছ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, বর্তমান যে কমিটি হয়েছে তা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
দীর্ঘ ১২ বছরেও কেন আপনারা উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সাবেক জেলা কমিটির ব্যর্থতা। তারা কোনো উপজেলাতেই কমিটি করতে পারেনি। আমি বারবার তাদেরকে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কথা বলিছি। তাদের গ্রুপিংয়ের কারণে তারা সম্মেলন করতে পারেনি।
দীর্ঘ ১২ বছরে একটা গ্যাপ হয়েছে ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়া এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকই সিনিয়র আছে যারা কমিটিতে পদ পায়নি, তারাতো হতাশই। যাদেরকে নিয়ে আমি দীর্ঘ দিন রাজনীতি করেছি, তারা আজকে পদ পায়নি। আমি দাবি জানিয়ে ছিলাম যেহেতু করোনার কারণে দুই বছর গেছে বয়স শিথিল করে সিনিয়রদের কমিটিতে রাখার জন্য। কিন্তু আমার কথা জেলা কমিটি রাখেনি। জুনিয়র নাইন-টেনের পোলাপান দিয়ে কমিটি দিয়ে কমিটিকে বিতর্ক করে ফেলেছে।
ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে নতুন কমিটির সভাপতি নাজমুল আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যায়নপত্র নিয়েই পাকুন্দিয়ার রাজনীতিতে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিতরাসহ একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আবার অনেকেই সস্তা প্রচারণা চালিয়ে ভাইরাল হতে ফেসবুকের আশ্রয় নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটি করা হয়েছে। পাকুন্দিয়া উপজেলার ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর কমিটি করা হয়েছে। যারা রানিং ছাত্র তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে সাবেক নেতা কমিটি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে ১২ বছরে উনি কী করতে পেরেছে? যে কোনো জায়গায় যখন কোনো একটি ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয় তখন সবাইকে তো আর সমানভাবে খুশি করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে একটি অংশের মধ্যে নানান ধরনের মান অভিমান থাকবেই।
আরএআর