গাইবান্ধায় উপনির্বাচনে অনিয়ম তদন্তে ইসির শুনানি শুরু

বন্ধ ঘোষণা করা গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়ম খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে শুনানি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে শুনানি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
প্রথম দিনে ১১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষ থেকে), গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ১৩৬ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়।
এর আগে মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ ৬৮৫ জনকে শুনানির আওতায় নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে এই শুনানির কার্যক্রম শুরু হয়। এতে কমিটির সদস্যসচিব ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে অংশ নেওয়া মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই ভোটের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেন। আবার অনেকেই পাল্টা অভিযোগও করেন তদন্ত কমিটির কাছে। অনেকে সুষ্ঠু ভোটের দাবি করলেও কেউ কেউ ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ভয়ে নিরুপায়ও ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দিনের তদন্তে ১৩৬ জনের উপস্থিতি ছিল। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তিন দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে নির্বাচন কমিশনে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করব। এর বাহিরে এই মুহূর্তে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া দ্বিতীয় দিন অর্থ্যাৎ ১৯ অক্টোবর সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে ৪০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে), সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৫২২ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।।
এরপর ২০ অক্টোবর গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুইজন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন ৫০টি, রিটার্নিং কর্মকর্তা একটিসহ মোট ৫১টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপনির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ মোট ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল। সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০ জন।
রিপন আকন্দ/আরএআর