প্রতারণা থামছে না সাইন্স ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানে সিলগালা হওয়ার পরও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন সাইন্স ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতারণা থামছে না। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ধরে এনে পরীক্ষা করিয়ে ভুল রিপোর্ট দেওয়ায় কারো চিকিৎসা বন্ধ থাকছে আবার কেউ কেউ ভুল চিকিৎসা পাচ্ছেন।
যদিও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষ বলছে, ল্যাব টেকনোলজিস্টের ভুলের কারণে এমনটি ঘটছে।
এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত ১০ অক্টোবর মাঝরাতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হনুফা বেগম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে ভর্তির পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীর বেশ কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা দেন।
রোগীর মেয়ে মুক্তা বলেন, মাকে ওয়ার্ডে রেখে নিচে ওষুধ আনতে গিয়ে ফিরে এসে জানতে পারি মায়ের শরীরের রক্তের স্যাম্পল নিয়েছে হাসপাতালের সামনের সাইন্স ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেকনিশিয়ান পরিচয়ে একজন। ওই টেকনিশিয়ান ওয়ার্ডেই থাকেন। তাকে রোগীর বেডে ঘুমাতেও দেখিছি।
তিনি বলেন, সেই রাতেই মায়ের রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়। সাইন্স ল্যাবের রিপোর্টে আসে ১ দশমিক ০৪। অর্থাৎ রিপোর্ট অনুসারে মা সম্পূর্ণ সুস্থ। হাসপাতালের ডাক্তার এই রিপোর্ট দেখে অবাক হন। কারণ মায়ের তখন মুমূর্ষু অবস্থা। শেষে ডাক্তার কোনো ওষুধ প্রেসক্রাইব করেনি। তিনি অন্য কোথাও পরীক্ষা করানোর জন্য পরামর্শ দেন।
মুক্তা বলেন, মুমূর্ষ অবস্থায় থাকলেও মায়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় সাইন্স ল্যাবের ভুল রিপোর্টের কারণে। পরদিন আমরা আরেকটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করালে সেখানে মাত্রা আসে ৭ দশমিক ৯২। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসা শুরু হয়। তার বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বলে জানানতিনি।
শুধু হনুফা বেগমের রিপোর্ট ভুল এমন নয়, গতকাল সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাতে সাইন্স ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে ভুল রিপোর্টের একটি ফাইল দেখা যায়। যেখানে বিভিন্ন সময়ে করা ভুল রিপোর্টগুলো সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।
সাইন্স ল্যাবের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক বিপুল দাস দাবি করেন, হনুফা বেগমের রিপোর্টটি ভুল হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে গিয়ে বায়োকেমিস্ট ‘প্রিন্টিং মিসটেক’ করেছেন। আমরা রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি মিটমাট করার জন্য। তিনি আরও বিস্তারিত জানতে মূল পরিচালক জিয়াউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে জিয়াউল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে সাইন্স ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ না করতে এই প্রতিবেদককে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, সাইন্স ল্যাব নামের ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বৈধ কাগজপত্র না থাকায় চলতি বছরের ৩০ আগস্ট সিলগালা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি কাগজপত্র হালনাগাদ করে চালু করেছে কিনা তা অফিসের ফাইল দেখে জানাতে পারব।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট ভুল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভুল রিপোর্ট দেওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে সেটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর