‘আমি কিছু চাই না, আমার পোলা দুইডার লাশ চাই’

পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নে চলছে শোকের মাতম। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাগরে ড্রেজার ডুবে নিখোঁজ সাত শ্রমিকের বাড়িতে চলছে কান্না আর আহাজারি। ঘটনার ২২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের।
গতকাল সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাগরে ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিক নিখোঁজ হন। এই খবর নিখোঁজ শ্রমিকদের বাড়িতে পৌঁছার পর আহাজারি শুরু হয়।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে আল-আমিন ফকির নামে এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার চর জৈনকাঠি গ্রামের ফকির বাড়ির রহমান ফকিরের ছেলে।
নিখোঁজরা হলেন- পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের সেকান্দার রারির ছেলে জাহিদ রারি, মোল্লা বাড়ির আব্দুর রহমানের ছেলে মো. তারেক মোল্লা, আনিচ মোল্লার দুই ছেলে ছেলে শাহীন মোল্লা ও ইমাম মোল্লা এবং আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মোল্লা। এছাড়া ওই গ্রামের হাওলাদার বাড়ির ইউসুফ হাওলাদারের ছেলে মো. বসার হাওলাদার, এবং নুরু সর্দারের ছেলে মো.আলম সর্দার,নিখোঁজ রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের চর জৈনকাঠি গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাবাহারা সন্তানদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। কেউবা সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আবার কেউবা স্বামীকে হারানোর সংবাদে আহাজারি করছেন। নিখোঁজ সন্তানের চিন্তায় বাবা-মায়ের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের বাতাস। ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে দরিদ্র পরিবারগুলো। এলাকার মানুষজন নিখোঁজদের বাড়িতে এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
নিখোঁজ শ্রমিক মো. তারেক মোল্লার বাবা আব্দুর রহমান বলেন, বন্যা চলে তারপরও চাকরির ভয়ে কিনারায় যেতে পারেনি। আমার বুকটা খালি হইয়া গেছে কে খাওয়াইবে আমাগো, আমাগো ঘরের একমাত্র ইনকাম করতো আমাগো তারেক। আমার তারেকের লাশটা দেন আইন্না। আমি একটু দেখি আমার তারেকরে।
এ সময় নিখোঁজ দুই শ্রমিকের বাবা আনিচ মোল্লা বলেন, ‘আমার দুই ছেলে আমার কাছ থেকে কেন আল্লাহ নিয়ে গেল। ওরা গত ১ মাস আগে ড্রেজারে চুক্তিতে কাজ করতে গেছে। গতকাল যখন বন্যা শুরু হইছে তহন আমাগো লগে ফোন দিয়া কথা কইছে। এর কতক্ষণ পর হইতে ফোন বন্ধ। আমি কিছু চাই না আমার পোলা দুইডার লাশ চাই, কী দিয়ে কী হয়ে গেল আমি বুঝতে পারছি না।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগতে রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বালু উত্তোলনের ড্রেজারটি আটজন শ্রমিকসহ ডুবে যায়। উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ১০০০ ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে বালু উত্তোলনের ড্রেজারটি (সৈকত-২) রাখা ছিল। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে প্রবল স্রোত ডিঙিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।
মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর