উত্তরবঙ্গে প্রথমবার তীন চাষ করে হইচই ফেললেন মতিউর
দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে কোরআন মাজিদে বর্ণিত তীন। তীনের বাগানজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। গাছের ডগায় ডগায় ধরেছে ফল। ফলগুলোর মাঝে লুকিয়ে আছে কৃষকের স্বপ্ন। বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাদা সুতার জালের নিচে দোল খাচ্ছে তীন ফল। দেখতে ডুমুর ফলের মতো। সারিবদ্ধ বাগানের গাছগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।
মরুভূমির এই মিষ্টি ফলের বাগান করে হইচই ফেলে দিয়েছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের মালারপাড়া গ্রামের কৃষক মতিউর মান্নান সরকার। পতিত জমিতে তীন চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
বাগান মালিক মতিউর মান্নান জানান, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে গাজীপুর থেকে ৯০০ চারা এনে চার বিঘা জমিতে তীন চাষ শুরু করেন। প্রতিটি গাছ ৪৫০ টাকায় কিনেছেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানের অধিকাংশ গাছে ফল এসেছে। ফলের পাশাপাশি চারা তৈরির কাজ করছেন তিনি। বাগানে পাঁচ জাতের গাছ রয়েছে।
বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত মতিউর মান্নান। গাছ ও ফল পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে আড়াআড়ি বাঁশের খুঁটি দিয়ে ওপরের অংশে সাদা সুতোর জাল দিচ্ছেন। বাগানের সারি সারি গাছের ডগায় দোল খাচ্ছে তীন ফল। গাছগুলোর গোড়ায় মাটির উপরিভাগে প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে রেখেছেন। বাগানে ১০ জন শ্রমিক পরিচর্যার কাজ করছেন। এলাকায় এই ফলের চাষ প্রথম হওয়ায় প্রতিদিন দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা।
বাগান পরিচর্যা শ্রমিক হাসেম আলী বলেন, আমরা ১০ জন তীন ফলের বাগানে কাজ করি। কাজ করে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে আয় হয়। এতে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলে। প্রায় সব গাছে তীন ফল ধরেছে। যদি এলাকায় আরও তীন চাষ হয় অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।
বাগান দেখতে আসা দাউদপুর গ্রামের জুলহাজ আলম বলেন, তীন ফলের বাগানটি অনেক সুন্দর। কোরআনে এই তীন ফলের কথা বলা হয়েছে। এজন্য আগ্রহ নিয়ে দেখতে এলাম।
দাউদপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, তীন ফলের বাগান দেখতে এবং চাষাবাদ সম্পর্কে জানতে এসেছি। আমিও তীন ফলের বাগান করতে চাই।
মুদি দোকান করতাম। করোনায় অনেকের মতো আমার ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। চাষাবাদের চিন্তা মাথায় নিয়ে ছোট বোনের পরামর্শে বেশ কিছু বাগান পরিদর্শন করি। পরে তীন চাষের সিদ্ধান্ত নিই।
মতিউর মান্নান, তীন বাগানের মালিক
তিনি বলেন, তীন ফল উচ্চফলনশীল। গাজীপুর থেকে ৯০০ চারা ৪৫০ টাকা দরে কিনে এনে চার বিঘা জমিতে বাগান করেছি। রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় তীন ফল ধরেছে গাছে।
তিনি বলেন, প্রায় ৯০০ গাছেই ফল ধরেছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল বিক্রি শুরু করব। এ পর্যন্ত বাগানে প্রায় ২৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও এই ভেবে আনন্দ লাগছে, কয়েকদিন পরই তীন ফল বিক্রি করে আমার খরচ তুলব। বাজারে এক হাজার টাকা কেজিতে ফল বিক্রি করব। পাশাপাশি বাগানটি আরও বড় করব।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গে প্রথমবারের মতো তীন ফলের চাষ হয়েছে। মতিউর রহমান অনেক আগ্রহ নিয়ে তীন চাষ করেছেন। তার বাগানের ৯০০ গাছেই ফল ধরেছে। আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছি এবং করব।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তীন মরুভূমির ফল। অত্যন্ত সুস্বাদু ফল এটি। দেহের জন্য অনেক উপকারী। ফলটির বহু ঔষধি গুণ রয়েছে। ধীরে ধীরে যাতে বিস্তার ঘটানো যায়; সেজন্য মতিউর রহমানকে নতুন করে তীনের চারা তৈরির পরামর্শ দিয়েছি। ইতোমধ্যে তিনি চারা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। অন্যরা আগ্রহ দেখালে এখান থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারবেন।
এএম