ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন মর্জিনা

জীবন-জীবিকার তাগিদে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন মাদারীপুরের মর্জিনা বেগম (৩৫)। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেছেন তিনি নিজেই। স্বল্পপুঁজি নিয়ে নেমে পড়েছেন ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝালমুড়ির বাটি হাতে দেখা মেলে তার।
মাদারীপুর সদরে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের মিলগেট এলাকায় মর্জিনা বেগমের বসবাস। বিয়ে হয়েছিল মুন্সিগঞ্জের ছালাম ব্যাপারীর সঙ্গে। স্বামী ছালাম ব্যাপারী পেশায় ছিলেন বেলুনবিক্রেতা, রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বেলুন বিক্রি করতেন তিনি। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের অভাবের সংসার। ভাড়াবাড়িতে থেকে কোনোরকমে চলছিল তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার।
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যুর পর মর্জিনা বেগমের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। নিরুপায় হয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। এখানে এসেও দরিদ্রতা পিছু ছাড়েনি তাকে।
বাবার বাড়িতে ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই। মর্জিনার বড় ছেলে শাওন ব্যাপারী (১৪) দিনমজুরের কাজ করলেও তাতে চলছিল না সংসার। তবে হাল ছাড়েননি মর্জিনা।
অবশেষে স্বল্পপুঁজি নিয়ে মর্জিনা নিজেই নেমে পড়েছেন ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। নিজ এলাকাতে লজ্জায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে না পারায় চলে আসেন মাদারীপুর শহরে। এখানে এসে ডিসি ব্রিজ ২ নম্বর শকুনি এলাকায় একটি টিনের বাসায় ছেলে-মেয়েদের ভাড়া থাকেন। তার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন সংগ্রামী এই নারী। ঝালমুড়ি বিক্রি করে দিনে আয় করেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
মর্জিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি। অনেক কষ্ট হয় সংসার চালানোর জন্য। তিনটা বাচ্চা নিয়ে আমি অসহায়। ভিক্ষা চাইলে মানুষ আমাকে লজ্জা দিব। তাই আমি ছেলেমেয়েদের বাসায় রেখে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি আর ঝালমুড়ি বিক্রি করি। নানান মানুষে নানান কথা বলে। আমি মনে কিছু করি না। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্যই তো করি। যদি পারেন আমাকে কেউ একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।’
ক্রেতা রাসেল হাওলাদার বলেন, ‘আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি কোনো মহিলা রাস্তায় এসে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। সমাজের বিত্তবান যারা আছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, সবাই যেন এই মহিলার পাশে এসে দাঁড়ায়।’
আরেক ক্রেতা ওয়াহিদুজ্জামান কাজল বলেন, ‘তিনি প্রতিনিয়ত এখানে এসে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। একটা মহিলা কতটা অসহায় হলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন।’
কেনদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, এর আগে তার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাইনি। তিনি আমার কাছে কখনো সাহায্যের জন্য আসেননি। তাকে সাহায্য করার মতো এই মুহূর্তে সরকারি কোনো ফান্ড নেই। তবে তার ব্যাপারে যদি কারও কাছে কোনো সুপারিশ করা লাগে আমি করব।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, মর্জিনা বেগমকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়ার মতো কোনো প্রকল্প আমাদের হাতে নেই। তবে সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাকে সাহায্য করব। পরবর্তীতে সরকারি কোনো প্রকল্প আমাদের হাতে আসলে তার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখব।
এমএসআর