চুলা বিক্রির টাকায় চলছে মা-ছেলের সংসার

কখনো একটি, আবার কখনো দুটি চুলা বিক্রি হয়। প্রতিটি চুলা ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। চুলা বিক্রির টাকা দিয়ে চলছে মা-ছেলের সংসার। তবে যেদিন বিক্রি হয় না সেদিন অনাহারে থাকতে হয়। বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদীর পাশে সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘরে থাকা রাজিয়া বেগম এভাবেই তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন।
রাজিয়া বেগম বলেন, ‘চুলা বিক্রি হলে খাওন জোটে, নাহলে দিন ভুকা যায়। গরিবের কপাল এমনই হয়। এক মাসের সন্তান গর্ভে রেখে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর থেকেই কষ্টের আর সীমা নেই। বাকি জীবন আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেই চলতে চাই।’
তিনি বলেন, অনাগত সন্তান রেখে স্বামী আলমগীর শেখ মারা যায় ২০০১ সালে। সে সময় মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না কোথাও। তাই ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে এই নদীর পাড়েই থাকি। শীতে প্রচণ্ড কষ্ট পেতে হয়, ঠান্ডা বাতাস ঢোকে। কিন্তু বর্ষায় কষ্ট আরও বেশি, ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে মেঝেতে, সব কিছুই ভিজে যায়। আর ঝড় হলে তো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যায়। সে সময় সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে হয়। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযানে সব ভেঙে দিয়ে যায়, পরে আবার কোনো রকম খড়কুটো দিয়ে ঘর তৈরি করে থাকি।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী বলেশ্বর নদীর ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই বাবা রুস্তম হাওলাদার বাগেরহাটের নদীর পাড়ে আশ্রয় নেয়। বাপ-মা ও স্বামী হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে আছি।
ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে মাটির চুলা বানানো শিখেছি। এখন সেই চুলা বিক্রি করেই চলছে মা-ছেলের সংসার। কিন্তু দিন বদলেছে, মাইনষে আর আগের মতো মাটির চুলা কেনেন না। সব দেহি গ্যাসে রান্দে। তারপরও বাইরে রান্দনের লাগে, শীতে রস জ্বাল দেওনের জন্য কেউ কেউ কিনে নিয়া যায়।
রাজিয়া বেগম
নদীর চর থেকে মাটি নিয়ে এসে তাই দিয়েই চুলা তৈরি করি। এক একটি চুলা তৈরি করতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। কষ্ট অনুযায়ী চুলার দাম পাই না। পয়সার অভাবে ছেলেকে পড়ালেখাও করাতে পারিনি। ছেলে এখন ইলেক্ট্রিকের কাজ শিখতেছে ।
রাজিয়া আরও বলেন, এতদিন এহেনে থাকছি, কেও কখনো সাহায্য করেনি। অনেকের কাছে ধরনা দিছি। কতজন আইল, ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিছু আর হয় না। ভয় লাগে যদি কখনো এহেন থেকে আমাগো উঠায়ে দেয়, তহন কই যাব? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার শেষ দাবি, তিনি একখান ঘর মোরে দিলে একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।
প্রতিবেশী কাজল মৃধা বলেন, আমরা কয়েকটি পরিবার এই লঞ্চঘাটে থাকি। সবাই আমরা গরিব, কিন্তু এর মধ্যে রাজিয়া বেশিই অসহায়। ওর বাপ-মা, স্বামী কেউ নেই। থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, রাজিয়া নদীর চরে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই ওর জীবনযাপন। মাটির চুলা বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে চলে। অনেক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, কিন্তু রাজিয়ার ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সরকার যদি ওর সহায়তায় এগিয়ে এসে ঘর তৈরি করে দেয় তাহলে হয়তো বাকি জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারবে।
এসপি