ধনেপাতার দাম বিঘায় কমেছে ১৫ হাজার, হতাশ চাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ধনেপাতার সুনাম দেশজুড়ে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ অন্যান্য জেলায়। তবে চলতি বছর আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ ধনেপাতা চাষিরা।
জানা গেছে, জেলায় এবার ৯৫ হেক্টর জমিতে ধনেপাতার চাষ হয়েছে যা গতবারের তুলনায় কম। সেইসঙ্গে বিঘা প্রতি ধনেপাতার দাম কমেছে ১০-১৫ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার দেবিনগরের ধনেপাতা চাষি মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে ধনেপাতার চাষ করি। গত বছরও প্রতি বিঘা ধনেপাতা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছি ২৫-৩৫ হাজার করে। অথচ এ বছর ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনকি গত বছরের চাইতে এ বছর ডিজেল, সার, বীজের দাম অনেক বেড়েছে।

আমিনুল ইসলাম নামে এক ধনেপাতা চাষি বলেন, বাজারে ভালো চাহিদা থাকার পরও চলতি বছর ধনেপাতার দাম কম। আমাদের ধারণা, রাজধানী ঢাকাসহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এসব এলাকার আশপাশের কোনো জেলায় হয়ত ধনেপাতার ব্যাপক চাষ হয়েছে। তাই আমাদের জেলার ধনেপাতার চাহিদা কমতে পারে।
চরবাগডাঙা এলাকার একরামুল হক বলেন, এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধনেপাতার আবাদ করেছি। জমিতেই পাতা বিক্রি করেছি ৫৫ হাজার টাকার। এতে খুব একটা দাম না পেলেও আশা করছি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ধনিয়া (মশলা) বিক্রি করব আরও ৩০-৩৫ হাজার টাকার। এছাড়া ভাদ্র মাসের শেষের দিকে ধনিয়া চাষ করে দুই মাসে ৫০-৫৫ হাজার টাকা আয়ের আশা করছি। কারণ সেসময় ধনেপাতার চাহিদা থাকে ও চাষাবাদ কম হয়।
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৫ বছর ধরে ধনেপাতার চাষ করে আসছি। খরচ কম আয় বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই ধনেপাতার চাষ করি। এবার ধনেপাতার আবাদ ভালো হয়েছে। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। অথচ চাহিদা কম থাকায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

সদর উপজেলার ইসলামপুর এলাকার ধনেপাতা ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বলেন, ৪০ বছর ধরে ধনেপাতার ব্যবসা করে আসছি। চলতি মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ১০ বিঘা জমির ধনেপাতা কিনেছি। মাসখানেক ধরে এসব ধনেপাতা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছি। ধারণা করছি, ধনেপাতা থেকে কয়েক লাখ টাকার ব্যবসা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের একটি কোচের বুকিং মাস্টার আবদুল আলীম। তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানির পরিবহনেই গত মৌসুমে প্রতিদিন দুই-তিন গাড়ি ধনেপাতা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হতো। এবার খরচ বেশি হওয়ায় ব্যাপারীরা আসতে পারেনি। তারপরও কিছু কৃষক এবং আড়তদার ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে ধনেপাতার চাষ হয়েছে। এর চাষ বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার ধনেপাতা বিক্রির আশা করছে কৃষি বিভাগ।
জাহাঙ্গীর আলম/এসপি