কাউন্সিলররা ভোটারদের বাড়িতে, গণসংযোগে ব্যস্ত মেয়র প্রার্থীরা

সকাল থেকে গণসংযোগ, দুপুর হলেই বাড়ছে প্রচারণা। পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে প্রার্থীদের পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে। যেন প্রতীক বরাদ্দের পর জমে উঠেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণা, পথসভা, গণসংযোগ আর ভোটের জন্য বাড়ি বাড়ি ছুটছেন প্রার্থীরা। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের চেয়ে মেয়র প্রার্থীদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
১৭ দিন প্রচারণার সুযোগ পেয়ে অনেক প্রার্থী কর্মপরিকল্পনার ছকও কষেছেন। তবে পথে-ঘাটে কুশল বিনিময়ের সঙ্গে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আর মেয়র প্রার্থীরা ভোট চেয়ে করছেন গণসংযোগ ও পথসভা। ভোট গ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে প্রচারণা।
ইসির তথ্যনুযায়ী, রসিক নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ২৫৫ জন। এক্ষেত্রে ভোটের মাঠে মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী ছাড়াও ১১টি সংরক্ষিত আসনের বিপরীতে কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন, ৩৩ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগে বের হন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। নগরীর হাজিরহাট, মুচির মোড়, চেয়ারম্যানের মোড়, মনোহর বাজার, সুকানচৌকি বাজার, হাসনা বাজার ও কেল্লাবন্দ কাচারি এলাকায় লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন সাবেক এই মেয়র।

এ সময় মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, গত পাঁচ বছর অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। আমার আগে একজন সরকার দলীয় মেয়র (সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু) ছিলেন। উনার সময়ে রংপুর সিটির উন্নয়নে কাজ হয়েছিল ২৭০ কোটি টাকার। আর গত পাঁচ বছরে আমি সাড়ে ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আমি কাজপাগল মানুষ, ঘড়ির কাটা দেখি না। সিটির উন্নয়নমূলক কাজ নিজে থেকে তদারকি করার জন্য ভোর থেকে সকাল, দুপুর এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত, আবার কখনো কখনো রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছুটে বেড়িয়েছি। এটা অন্য কোনো মেয়র কখনো করেছে কি না জানি না। এখন মূল্যায়ন করার দায়িত্ব জনগণের।
একই সময়ে রংপুর নগরীর সিটি বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। তার সঙ্গে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের হাতে নৌকা প্রতীকের লিফলেট বিলি করে ভোট প্রার্থনা করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, উন্নয়নের জন্য এবারের নির্বাচনে নগরবাসীকে নৌকায় ভোট দিতে হবে। সম্ভাবনাময় এই সিটির উন্নয়ন করতে হলে ১০০ বছরের একটি পরিকল্পনা দরকার। অথচ সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার ১০ বছর হলেও একটি মাস্টার প্লান করা সম্ভব হয়নি। তাই আমি নির্বাচিত হলে রংপুর সিটির পরিকল্পিত উন্নয়ন করে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব।
মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি এবং লতিফুর রহমান মিলনও বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
এদিকে মেয়র প্রার্থীদের নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ড ঘিরে প্রচারণার ছক কষে ভোটের মাঠে থাকতে হলেও কাউন্সিলর প্রার্থীরা রয়েছেন তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। সিটির বর্ধিত এলাকাগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের মন জয় করতে প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে ছুটছেন। এক্ষেত্রে কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সিটির ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুল হাসান টিটু ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে এবার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন। এর আগে জয়ের মালা তার গলায় না উঠলেও এবার তিনি সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে সাড়া পেয়ে আশাবাদী। দুপুরে খামারপাড়া এলাকায় লিফটলেট বিলি করার সময় তিনি বলেন, বিনা অর্থে ভোট দিন, বিনা অর্থে শতভাগ সেবা দিব স্লোগানে আমি নির্বাচন করছি। আমার ওয়ার্ডে ৮ জন প্রার্থী। আর ভোটার সংখ্যা সাড়ে ১৩ হাজার। এতগুলো ভোটারের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচারণার সময়টা খুব কম। তারপরও এলাকার সব ভোটারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। নির্বাচিত হলে সিটির মডেল ওয়ার্ড গড়তে সব ধরনের চেষ্টা করব।
সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা একটি ওয়ার্ড আর সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটছেন তিনটি ওয়ার্ডে। নগরীর ২১, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন শারমিন আরা মিতু। এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি। বয়সে তরুণ এই নারীর স্বপ্ন তার ওয়ার্ডের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করার। সঙ্গে তিনি নির্বাচিত হলে বাল্যবিয়ে রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন।
এদিকে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে অনুরোধ জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে। এজন্য প্রার্থী ও ভোটারসহ সবার সহযোগিতা থাকা চাই। নির্বাচনের প্রচারণায় যেন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ না ওঠে, সে ব্যাপারে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের সজাগ থাকতে হবে। আচরণবিধি ভেঙে প্রচার চালালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সিটিতে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর এ সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হলেও এবার পুরো সিটির ২২৯টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি