নীলফামারীর ৫টি রেলস্টেশন বন্ধ

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে ৭০ কিলোমিটার। এই রেলপথে স্টেশন রয়েছে ৯টি। এর মধ্যে জনবল সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে ৫টি স্টেশন।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনগুলোর বেহাল দশা। দেখাশোনার দায়িত্বে কেউ না থাকায় বেশিরভাগ অবকাঠামো নষ্ট ও মালামাল খোয়া যাচ্ছে। আবার কয়েকটির অবস্থা একদমই নাজুক। এতে ওই এলাকাগুলোর হাজারো মানুষের কম দুর্ভোগ ও সহজলভ্য রেলযাত্রা এখন অতীত।
অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হয় বাস, অটো রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনে। স্টেশনগুলো দ্রুত পুনরায় চালু করার দাবি এলাকাবাসীর। কর্তৃপক্ষ বলছেন জনবল নিয়োগ দিলে চালু হবে স্টেশনগুলো।
জানা গেছে, প্রায় ১ যুগ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে জেলার সদর উপজেলার দারোয়ানী উলটপাড়া খয়রাত নগর স্টেশন। একসময় আধা পাকা টিনসেডের স্টেশনটি থেকে পার্শ্ববর্তী খানসামা, পাকেরহাট, বীরগঞ্জ ও রানীরবন্দর এলাকার মানুষরা সৈয়দপুর, পাবর্তীপুর, ভবানীপুর যেত। তবে জনবল সংকটে স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার পর সবধরনের কার্যক্রম স্থগিত হয়। একইভাবে জনবল সংকটে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় নীলফামারী কলেজ, দারোয়ানী, তরনীবাড়ী ও মির্জাগঞ্জ রেল স্টেশন।
এদিকে চিলাহাটি থেকে প্রতিদিন ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি থামে বন্ধ থাকা কয়েকটি স্টেশনে। এতে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠছে যাত্রী। এতে করে ট্রেনের ভেতরে টিকিট কাটার সময় টিটির সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এছাড়াও বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহন করায় বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ সময় স্টেশনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় অবকাঠামো ও মালামাল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষের চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। সহজ ও কম খরচে রেলপথে ভ্রমণ এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অতীতমাত্র। অতিরিক্ত টাকায় এখন বাসে চলাচল করতে হচ্ছে। তাদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে পুনরায় রেল স্টেশনগুলো চালু করার দাবি জানিয়েছে তারা।
উলটপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে তো সব কিছু চালু ছিল। তেরো চৌদ্দ বছর ধরে এখানের সব বন্ধ। এটা যে স্টেশন সেটাই এখন বোঝা যায় না। ট্রেনটা চললে হামার যাতায়াত করতে সুবিধা হয়।
স্বপ্না রানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবার বাড়ি এখানে। আমার বিয়ের ৩ বছর আগে এখানে ট্রেন থামতো, স্টেশন মাস্টার ছিল। আমার বিয়ের ১২ বছর পার হচ্ছে এখানে আসলে এখন শুধু ভাঙাচুরা স্টেশন দেখি। অনেক কষ্ট করে আসতে হয় বাবার বাড়ি। স্টেশনটা চালু থাকলে এতো কস্ট হতো না। স্টেশন চালু হবে হবে শুনছি অনেকদিন ধরে, কিন্তু কবে চালু হবে সরকারই জানে।
ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেনে গেলে খরচ কমে। কিন্তু ট্রেন তো সব জায়গায় থামে না, এজন্য সমস্যা হয়। যদি বন্ধ স্টেশনগুলো চালু হয় তাহলে সহজে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুপাড়ি কিনতে পারবো।
নীলফামারী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল ইসলাম রতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্ধ স্টেশনগুলোর বেহাল দশার কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন জনবল বৃদ্ধি পেলে এগুলো আবার চালু করা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহীর মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে আমাদের স্টেশন মাস্টার সংকট নেই। তাদের সব কিছু সম্পন্ন হয়েছে। চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে তাদের বন্ধ স্টেশনগুলোতে বসানো হবে। তবে তার আগে তাদের ভালো করে একটা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করা জরুরি। আসা করি কয়েক মাস পরেই অনেক স্টেশন চালু হবে।
শরিফুল ইসলাম/এমএএস