শত বছর ধরে হাওরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ ছাতা

শত বছর ধরে কাউয়াদীঘি হাওরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে এক আমগাছ। রোদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত বছর ধরে পথিক, কৃষককে ছায়া ও ফল দিয়ে প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে চলেছে গাছটি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওরের কাগজি বাড়ি নামক এলাকায় সবুজ ছাতার মতো গাছ দুটি দাঁড়িয়ে আছে। অন্য সঙ্গী-সাথীদের হারিয়ে শুধু আমগাছটি টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। হাতিম মিয়া নামে এক কৃষক গাছটি লাগিয়ে ছিলেন। তিনি প্রায় ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাও প্রায় ৩০ বছর আগে। অথচ আজও কৃষক, পথিককে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে তার লাগানো সবুজ ছাতা।
স্থানীয়রা জানান, কাউয়াদীঘি হাওরের বুকে শত বছর আগে লাঙল দিয়ে আমনের জমিতে চাষ দিচ্ছিলেন অল্প বয়সী এক কৃষক। সারা শরীর তার রোদে পোড়ে। কোথাও একটুখানি ছায়া নেই। না আছে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ, না আছে কোনো গাছ। কৃষকটি মনে মনে ঠিক করলেন, এই খোলা প্রান্তরে গাছ রোপণ করবেন। সেই গাছের ছায়ায় বসে একটুখানি জিড়িয়ে নেবেন কৃষক, জেলে ও রাখাল। একদিন আমগাছের কয়েকটি চারা পুঁতে দিলেন উঁচু ভিটায়। তার পুঁতে দেওয়া সেই গাছের চারা হাওরের ঝড়ো বাতাস সামলে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

কাগজি বাড়ি এলাকায় গেলে স্থানীয়দের মুখে শোনা যায় গাছটির জন্মের গল্প। একাটুনা ইউনিয়নের হাতিম মিয়া একটু ছায়ার আশায় গাছ দুটি লাগিয়েছিলেন।
গ্রামের কৃষক আলমগীর বলেন, শত শত বছর আগে জমি চাষ করতে গিয়ে রোদে ধরেছিলে কৃষক হাতিম মিয়ার। কোনো ছায়া ছিল না। তাই এই গাছ রোপণ করেন। আজ এই গাছের নিচে বসে এখন আমরা ছায়া পাই। আমাদের ছাতা হিসেবে কাজ করে। গাছটি এখনো সজীব প্রাণ। প্রতিবছরই আম ধরে।
গাছের আশপাশে এখন শূন্য হাওর। হাওরের বুকে জল শুকিয়েছে। কৃষকরা ধান কেটে এই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন। বাতাস এলে গাছের পাতা মৃদু কোলাহলে নীরবতা ভাঙে। সন্ধ্যা নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসে পাখিদের দল। মৌসুমে ফল পেরে খান স্থানীয়রা। এভাবেই শত শত বছর ধরে মানুষকে ছায়া ও ফল দিয়ে যাচ্ছে গাছটি।
হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, এখানে যারা বিশ্রাম নেন, তারা শুধু ছায়াই পান না। আমও খেতে পারেন। এ এক অন্য রকমের শান্তি ও স্বস্তি। দিগন্তের কাছে একলা দাঁড়ানো গাছ দুটোই শত বছরকে ধরে আছে নীরবে। গাছের বিভিন্ন অংশ পচন ধরেছে। যদি পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা এদিকে নজর দেন তবে গাছটিকে রক্ষা করা যাবে। নয়তো হঠাৎ ভেঙে পড়তে পারে।
ওমর ফারুক নাঈম/আরকে