কিশোরকে খুঁটিতে বেঁধে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা

শরীয়তপুরের ডামুড্যায় চোর সন্দেহে ফাহিম (১২) নামে এক কিশোরকে খুঁটিতে বেঁধে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কিশোর ফাহিম বর্তমানে শরীয়তপুরের শাহজালাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ফাহিম ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা ইউনিয়নের আনিছ উদ্দিনের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে ৩৬নং মধ্য সিড্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার সময় ফাহিমকে ডেকে আনেন সিড্যা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজান ঢালী। পরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীরের কাপড় খুলে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলে মিজান ও তার দুলাভাই মহি ঢালী। এরপর ফাহিমের গায়ে পঞ্চাশ থেকে ষাট বালতি পুকুরের ঠান্ডা পানি ঢালা হয় এবং লোহার রড দিয়ে বেধম মারধর করা হয়। এতে ফাহিমের শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ফেটে রক্ত বের হয়।
ফাহিমের দাদা আব্দুল আজিজ সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত শুক্রবার রাতে আমার নাতি ব্রাজিলের খেলা দেখতে প্রাইমারি স্কুল মাঠে যায়। রাত বেশি হওয়ায় আমরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। পরে রাত ৩টার দিকে পাশের বাড়ির রাসেল আমাকে কল দিয়ে ফাহিমকে মিজানের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানায়। আমি দ্রুত গিয়ে দেখি আমার নাতিকে খালি গায়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার পুরো শরীর ভেজা। ফাহিম ঠান্ডায় কাঁপছে এবং তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পরে সেখান থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি এবং সকালে হাসপাতালে ভর্তি করি।
তিনি আরও বলেন, বারবার জিজ্ঞাসা করার পরেও কেন ফাহিমকে মারা হয়েছে এ বিষয়ে তারা কোনো উত্তর দেয়নি। এখন মহি ঢালীসহ দশ থেকে পনেরো জন হাসপাতালে এসে হুমকি-ধামকি দিয়ে গেছে। আমাদের নাকি এলাকা ছাড়া করবে।
ফাহিম বলেন, আমি মাঠে বসে ব্রাজিলের খেলা দেখছিলাম। এমন সময় মিজান ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়িতে ঢোকার পর কিছু বুঝার আগেই আমাকে খালি গায়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলে। প্রথমে আমার শরীরে পানি ঢালে, এরপর মিজান ও মহি ভাই রড দিয়ে পেটাতে থাকে। এভাবে দাদা-দাদি না আসা পর্যন্ত আমাকে মারতে থাকে। এর মধ্যে মিজান বেশ কয়েকবার চাপাতি দিয়ে আমার গলায় ধরে। আমাকে মেরে ফেললে তাদের নাকি কোনো কিছুই হবে না বলে জানান। চুরি করেছি বলে এই ব্যাপারে জোরপূর্বক স্বীকার করায়। অনেকবার মাফ চেয়েছি কিন্তু তারা কোনো কথা কানে নেয়নি।
অভিযুক্ত মিজান ঢালী বলেন, ফাহিম আমাদের ঘরের দরজা ভেঙে চুরি করতে ঢুকেছিল। আমরা টের পেয়ে ধাওয়া করলে ফাহিমকে রাস্তায় পাই। ফাহিমকে বেশি মারধর করিনি, শুধু শরীরে ছোট দুই মগ ঠান্ডা পানি ঢেলেছিলাম। এটা আমার ভুল হয়েছে। তবে ফাহিম যে চুরি করেছে তা স্বীকার করেছে এবং আমার কাছে ভিডিও আছে।
শরীয়তপুরের শাহজালাল হাসপাতালের আরএমও নাজমুল হোসেন বলেন, শরীরে বিভিন্ন আঘাত নিয়ে ফাহিম এখানে ভর্তি হয়। ওর শরীরে রড বা কাঠ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরীফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্যাতিত পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে ভেদরগঞ্জের মেয়র ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদেরকে ফোন দেয়। আমরা বাদীর উপস্থিতিতে দুই পক্ষের সমঝোতার আশ্বাসে তাকে ছেড়ে দিই। তবে এখন শুনছি হুমকি দিচ্ছে। এই বিষয়ে বাদীপক্ষ থানায় আসলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ