মুজিবুর রহমান নাম হওয়ায় গুলি করে মেরে ফেলে পাক বাহিনী

১৯৭১ সালের জুন মাস। চারদিকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। সে সময় হানাদার বাহিনীর টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে নিলুরখামার গ্রামের ২১ জন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। একে একে নাম শুনে সবাইকে ছেড়ে দিলেও শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নামের মিল থাকায় গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুজিবুর রহমানকে। তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো মেলেনি শহিদের স্বীকৃতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নে পাক হানাদার বাহিনীর টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সন্দেহের দৃষ্টি পড়ে নিরীহ এলাকাবাসীর ওপর। পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় সূর্যকুটি এবং নিলুরখামার গ্রামের ২১ জন ব্যক্তিকে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় প্রত্যেককে। যাদের মধ্যে ছিল ময়ছার আলী, মিজানুর ও হবিবুল্লাহসহ আরও অনেকে।
একে একে নাম জানার পর জিজ্ঞাসা করা হয় সর্বশেষ যুবককে। পাকবাহিনী যখন শোনে ওই যুবকের নাম মুজিবুর রহমান, তখনই মাথায় গুলি চালিয়ে খুলি উড়িয়ে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মুজিবুর রহমানের সহকর্মীদের ওপর বন্দুক তাক করে তার মরদেহ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা থাকলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান। যারা এখনো পাক হানাদার বাহিনীর হাতে সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন।
পাকিস্তানি বাহিনীর টেলিফোন সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করায় কিছু দিন পর নিলুরখামার গ্রামে ভোররাতে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলে পড়ে পাক সেনারা। গুলি চালিয়ে ৭৯ জন ব্যক্তিকে নিমর্মভাবে হত্যা করে। যে গ্রাম এখন নিলুরখামার বদ্ধভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে মুজিবুর রহমানের মতো হাজারো ব্যক্তিকে শহিদ স্বীকৃতি দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ- এমনটাই দাবি যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া এখানকার মানুষদের।
মুজিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বাবাকে হারাবার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও তাকে শহিদের মর্যাদা না দেওয়া সত্যি দুঃখজনক। আমি অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি আমার বাবাকে শহিদের স্বীকৃতি দিলে তার আত্মা শান্তি হবে।
এ ব্যাপারে কথা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ছমির আমিনুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে মিল থাকায় মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। যে নাগেশ্বরী উপজেলার ইতিহাসের অংশ। আমি যুদ্ধে নিহত মুজিবুর রহমানকে শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের বীর প্রতীক (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার) আব্দুল হাই সরকার বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত নাম না জানা পরিবারগুলোকে তালিকাভুক্ত করা না গেলেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নামের মিল থাকায় যেহেতু মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে, এজন্য তাকে শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
জুয়েল রানা/আরএআর