কোম্পানীগঞ্জে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট বাজারে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ-গোলাগুলির ঘটনায় আলাউদ্দিন (৩২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক ব্যক্তি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হন।
রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলাউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আলাউদ্দিন উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামের মমিনুল হকের ছেলে।
নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ আজিম বলেন, হাসপাতালে আনার পথে আলাউদ্দিন মারা যান।
তিনি আরও বলেন, আহতদের মধ্যে হৃদয় (২৩) নামে একজনের চোখে গুলি লাগে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল আলাউদ্দিনকে নিজের কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ নিহত আলাউদ্দিন আমার লোক। মির্জার লোক তাকে হত্যা করেছে। মির্জার লোক গত হরতালে পরিকল্পিতভাবে তার সিএনজি অটোরিকশা পুড়িয়ে দিয়েছে।’
আলাউদ্দিনের মামা ইকবাল হোসেন বাহার বলেন, ‘আমার ভাগনে সিএনজি চালাইতো। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। রাত ৯টার দিকে বসুরহাট পৌরসভার সামনে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পেয়ে আমরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তাররা জানায়, তিনি আসার পথে মারা গেছেন।’
এদিকে গুলিবিদ্ধরা হলেন মো. রাজিব, মাঈন উদ্দিন, শাহ আলম, আলা উদ্দিন, জাকির হোসেন হৃদয়, দেলোয়ার হোসেন, সোহেল, শাহাদাত হোসেন, আরাফাত হোসেন, বেলাল হোসেন সেলিম।
আহতরা হলেন সাহাব উদ্দিন, জনি, সেলিম, ওয়াহিদ কামাল, রিপন, রফিক চৌধুরী, পিনন চৌধুরী, দিপু, সুমন, আরিয়ান শিপন, শরীফ উল্যাহ টিপু, মানিক, শরীফ, আল মাহাদি, রাজিব হোসেন রাজু, নবায়ণ হোসেন, আদনান শাহ, সালা উদ্দিনসহ শতাধিক।
আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন ওসি মীর জাহিদুল হক রনি, এসআই জাকির হোসেন, নিজাম উদ্দিন, কনস্টেবল খোরশেদ আলম, আলা উদ্দিন ও আবুল কালাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার লোকজনের হামলা ও মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রূপালী চত্বরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে আ.লীগের একাংশ (মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপ)।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে থানার পশ্চিম পাশের সড়ক (মাকসুদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) দিয়ে সভায় হামলার চেষ্টা চালায় কাদের মির্জার সমর্থকরা। এ সময় উভয়পক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হলে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে এ সংঘর্ষ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৮টার দিকে মেয়র মির্জার সমর্থকরা বসুরহাট বাজারে একটি মিছিল বের করলে বাদলের সমর্থকদের সঙ্গে পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তারা বসুরহাট পৌরসভা প্রাঙ্গণে অবস্থান নিলে সেখানে কাদের মির্জা ও বাদল গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। সেখানে বাদল গ্রুপ পৌর ভবনে হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কাদের মির্জার সমর্থকরা।
এ সময় ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয়েছে দোকানপাট ও অটোরিকশা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের লোহারপুল এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন কাদের মির্জা সমর্থিত আ.লীগ কর্মীরা।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, প্রথমবার হামলার পর পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পুলিশসহ অনেকে আহত হয়। পরে রাতের দিকে পৌর ভবন এলাকায় আবারও সংঘর্ষে উভয়পক্ষ গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। পুলিশ ও র্যাব তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
হাসিব আল আমিন/এমএসআর