হাসপাতালে কয়েক হাজার চড়ুই, রোগীরাও উপভোগ করছে কলকাকলি

সন্ধ্যা হলেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চারিদিকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় পরিবেশ। গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে প্রতিদিন হাসপাতালের ছাদ ও আশেপাশে দেখা যায় হাজার হাজার চড়ুই পাখি। সন্ধ্যা নামার আগেই হাসাপাতালে ফেরে পাখিরা, সকাল হলেই আবার উড়াল দেয়। হাসপাতালে পাখিদের এমন বিচরণ সেখানকার গম্ভীর পরিবেশকেও বদলে দিয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনরাও উপভোগ করছে পাখির কলকাকলি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ভেতরে রয়েছে ফুলের বাগান ও আর বাইরে রয়েছে কাঞ্চন, নিম, কদম, পাইকড় গাছ। হাসপাতালের সেই সব গাছে, ছাদে প্রতিদিন আসছে কয়েক হাজার চড়ুই পাখি। প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই শুরু হয় পাখিদের আশ্রয় নেওয়ার মহড়া। এরপর গাছে-গাছে আশ্রয় নিয়ে খুব সকালে বেরিয়ে পড়ে আহারের কাজে।

গত কয়েক মাস ধরে এভাবেই হাসপাতালে শোকাহত পরিবেশ বদলে তৈরি হয়েছে মনোরম পরিবেশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে রোগী ও তাদের স্বজনদের। শুধু রোগী ও রোগীদের স্বজনরাই নয়, ছোট ছোট চড়ুই পাখির এমন মিলনমেলা দেখতে বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসে পাখি প্রেমীরা।
২৫০ শয্যা হাসপাতালের মালি আব্দুল কাদের জানান, সারারাত পাখিগুলো হাসপাতালের ছাদ ও আশেপাশের গাছে থাকে। সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে। সারাদিন মাঠেঘাটে খাবার খেয়ে আবার সন্ধ্যায় ফিরে আসে। সবচেয়ে ভালো লাগে সকাল ও সন্ধ্যায় পাখিদের যাওয়া ও আসার সময়ে। এ সময় খুব কিচিরমিচির শব্দ করে।
হাসপাতালের গ্যারেজ মালিক আনারুল ইসলাম কালু ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাখিদের শব্দে অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা দারুণ উপভোগ করেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি এলাকার সাইদুর রহমান (৫৫) গত ৬ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সঙ্গে আছেন তার মেয়ে মাহমুদা খাতুন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল-সন্ধ্যা হলেই পাখিদের যাওয়া আসা ও কিচিরমিচির শব্দ আমাদের মন ভালো করে দেয়। সে সময়ে জানালা খুলে দিয়ে উপভোগ করি।
আরেক রোগীর স্বজন সজল আহমেদ বলেন, হাসপাতাল মানেই নানা কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণার জায়গা। এখানে বিপদে পড়েই মানুষ আসতে বাধ্য হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই সকলের মন খারাপ থাকে। কিন্তু পাখিদের এমন বিচরণ সাময়িক সময়ের জন্য হলেও রোগী ও তাদের স্বজনদের মন ভালো করে। তাই এসব পাখির বিচরণে যাতে কোন বাধা সৃষ্টি না হয়, সেই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সহকারী ডা. সাদিকুল ইসলাম বলেন, পাখিদের যে অবাদ বিচরণ, তা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছে। তাই বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অনুরোধ করা হয়, তারা যেন এসব পাখিদের বিরক্ত না করে।
জানা যায়, হাসাপাতালের ছাদ ও চারদিকের বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেওয়া চড়ুই পাখিগুলো পাতি চড়ুই জাতের৷ এর প্রায় ২৫টি জাত রয়েছে। প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তাদের আবাস। অন্যান্য পাখির তুলনায় এসব পাখি অনেক ছোট। সাধারণত দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৬ সেমি (৬.৩ ইঞ্চি) ও ওজনে ২৪–৩৯.৫ গ্রাম (০.৮৫–১.৩৯ আউন্স) হয়। পাখির দেহ উজ্জ্বল কালো, বাদামি ও ধূসর চিহ্নযুক্ত।
শহরে বা গ্রামে, মানববসতির কাছাকাছি যেকোনো পরিবেশে তারা নিজেদের সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থাকলেও সাধারণত জনহীন বনভূমি, তৃণভূমি ও মরুভূমিতে এসব পাখি বসবাস করে না। শস্যদানা ও আগাছার বীজ চড়ুই পাখির প্রধান খাদ্য হলেও সুযোগ পেলে পোকামাকড়, উচ্ছিষ্ট ও নানান রকমের খাবার খায়।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেভ দ্যা নেচার এর প্রধান সমন্বয়ক রবিউল হাসান ডলার বলেন, এইগুলো হচ্ছে ইউরেশিয়ান ট্রি স্প্যারো। সাধারণত দলবদ্ধভাবে গাছে বাস করে। এইগাছ চূড়ইগুলো সূর্যদ্বয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাঠে যায়। আবার সূর্যাস্থের পর তারা নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে আসে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা-২০১২ আইন অনুযায়ী এই পাখি শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
জাহাঙ্গীর আলম/আরকে